নিজস্ব প্রতিনিধি: সরকারি ইজারাকৃত আশাশুনির হাড়িয়াখাল জলমহাল দখল করে রীতিমত রামরাজত্ব পরিচালনা করছে রহমত আলীগং। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুবাদে ইজারাদারকে হটিয়ে সুযোগ বুঝে জলমহালটি দখল করেছেন তিনি। প্রতিনিয়ত ভাড়াটে দুর্বৃত্তদের দিয়ে জলমহালে অবস্থান ও ইজারা গ্রহীতার মৎস্য ঘের থেকে বাগদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য লুটপাট করছেন তারা।
সরজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার কোদন্ডা মৌজার ১নং খাস খতিয়ানে হাড়িয়া খাল জলমহালের ৩২৪, ৩২৬, ৩২৮, ৪১৯, ৫৬৫/৬৬৬ ও ৫৬৭ দাগে ১১.৮২ একর জমি সরকারের কাছ থেকে বিল নাটানা মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি সঞ্জয় মন্ডল ১৪২৯-১৪৩১ সন পর্যন্ত ইজারা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি উক্ত জলমহাল পরিচালনার জন্য আশাশুনি উপজেলার আদালতপুর গ্রামের মৃত করিম শেখের পুত্র মো. নজিরউদ্দীন শেখকে কেয়ারটেকার নিয়োগ করেন। এছাড়া স্থানীয় নীলরতন রায়ের পুত্র কালিপদ রায়ের রেকর্ডীয় প্রায় ৮ বিঘা সম্পত্তি ভাঙনের ফলে উক্ত জলমহালের অভ্যন্তরে চলে গেছে। যে ৮বিঘা জমির হারি জমির মালিক কালিপদ রায়কে বাৎসরিক চুক্তিতে প্রদান করছেন নজিরউদ্দীন শেখ। সেখান থেকে নজিরউদ্দীন শেখ উক্ত জলমহালে নেটপাটা স্থাপন, পাহারাগৃহ নির্মাণ করে মৎস্য চাষ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছেন। বিগত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগের পর রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ বুঝে কোদন্ডা গ্রামের মান্দার গাজীর পুত্র রহমত আলী গাজী গত ১০আগস্ট উক্ত জলমহালের মালিকানা দাবি করে ভাড়াটে দুবৃৃত্তদের নিয়ে নজির উদ্দীন শেখের সত্ত্ব দখলীয় মৎস্য ঘেরটি দখলে নিয়ে প্রতিদিন মাছ ধরে লুটপাট করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী নজির উদ্দীন শেখ জানান, হাড়িয়া খাল জলমহালটি সরকারের ১নং খাস খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত। সরকার নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় ‘বিল নাটানা মৎস্য জীবি সমবায় সমিতির সভাপতি সঞ্জয় মন্ডল ১৪২৯-১৪৩১ সন পর্যন্ত ইজারা গ্রহণ করেন। যার মেয়াদ এখনো বলবৎ আছে। তিনি উক্ত জলমহাল পরিচালনার জন্য আমাকে কেয়ারটেকার নিযুক্ত করেন। আমি সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে মৎস্য চাষ করে ভোগ করে আসছিলাম। কিন্তু গত ১০আগস্ট রহমত আলী তার পুত্র ও জামাতার সহযোগীতায় সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে মৎস্য ঘেরটি দখলে নিয়েছেন। তাঁরা সার্বক্ষণিক ঘেরের বাসায় অবস্থান সহ মহড়া দিচ্ছে। আমরা উক্ত ঘেরে গেলে বা আইন আদালতের আশ্রয় নিলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকী দিচ্ছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে আমি ও আমার পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। রহমত আলীর নেতৃত্বে দূর্বিত্তরা অদ্যবদি প্রায় ২লক্ষ টাকার মাছ ধরে নিয়ে গেছে। আমি প্রশাসনের কাছে আমার মৎস্য ঘের পুনঃরুদ্ধার ও ক্ষতিপূরণ চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রহমত আলীর জামাতা জানান, ‘আমার শ্বশুর উক্ত জমির প্রকৃত মালিক। আমাদের কাছে সব কাগজপত্র আছে। আগে উনি উক্ত ঘের ভোগদখল করতেন। কিন্তু উনার দুর্বলতার সুযোগে নজিরউদ্দীন জোর করে উনাকে তাড়িয়ে দিয়ে ঘেরটি দখল করে। এখন আমরা আমার শ্বশুরের ঘের পুনরায় দখলে নিয়েছি।
স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, কালিপদ রায় (৭৫) বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি জলমহালটি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত। ওটা কখনো ব্যক্তি মালিকানায় ছিল না। নজিরউদ্দীন শেখ উক্ত জলমহালে দীর্ঘদিন মৎস্য চাষ করে। এমনকি জলমহালের মধ্যে আমার ৮বিঘা রেকর্ডীয় সম্পত্তি আছে যা আমি নজিরউদ্দীন শেখের কাছে হারি দিয়েছি।
উল্লেখ্য, রহমত আলী ইসলামকাটি সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের গত ৭-৭-১৯৬৩ ও ২৭-০৬-১৯৬৩ তারিখের দুটি দলিল দেখিয়ে উক্ত জলমহালের মালিকানা দাবি করেন। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী রহমত আলীর জন্ম তারিখ ২০-০৮-১৯৫৫ খ্রি.। সুতরাং দলিল রেজিষ্ট্রির সময় তার বয়স হওয়ার কথা সর্বসাকুল্যে ৮ বছর। ৮বছরের নাবালক সরাসারি দলিল গ্রহীতা হতে পারে কিনা বা দলিলে নাবালক কথাটি লেখা না থাকায় এলাকায় উক্ত দলিল নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শোনা যায়। এছাড়া উক্ত দলিল দুটির দাতা যথাক্রমে পাইকগাছার কাটিপাড়ার মধুসূদন চট্টোপাধ্যয়ের পুত্র শ্রী জোতিষ চন্দ্র চট্টোপাধ্যয় ও একই উপজেলার হরিঢালী গ্রামের শরদাচন্দ্রর পুত্র গোপাল চন্দ্র উল্লেখ থাকলেও আদৌ উক্ত ঠিকানায় দলিল দাতাদের কোন হদিস নেই। এছাড়া দেওয়ানী ৩৭৫/৭২ ও ৩৫৪/৭২নং মামলার ডিক্রিমূলে হাড়িয়াখাল জলমহালের ২০০ বিঘা সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে রহমত আলী। যে ডিক্রির নকল উত্তোলন করা হয় যথাক্রমে ১৫-০২-৯০ ও ২০-০২-৮৩ তারিখে। সরকারের পক্ষে খুলনা জজকোর্টের আইনজীবী রামপ্রসাদ সরকার খুলনা জেলা জজ আদালতের মহাফেজ খানা ও সাতক্ষীরা ২য় মুনসেফ আদালতে উক্ত ডিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে গত ১২-০২-২৪ তারিখে খুলনা জেলা জজ আদালতের মহাফেজ খানার নথি রক্ষক স্বাক্ষরিত সরকারি ফরমে বলা হয় ‘অত্র মামলার নিষ্পত্তির তারিখ উল্লেখ্যে অত্র মামলা না থাকায় সঠিক তথ্য সরবরাহ করা হইল না।’
উল্লেখিত বিষয়ে এলাকার একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, ‘রহমত আলী বিভিন্ন সময় জাল দলিল ও জাল ডিক্রি করে উক্ত জলমহালের মালিকানা দাবি করেন যা ভিত্তিহীন। এলাকার সচেতন মহল উক্ত সরকারি জমি যাতে কেউ জবরদখল করতে না পারে। তার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।