বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের নিকৃষ্টতম একটি দিন ছিল ২৮ অক্টোবর ২০০৬।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালের সেই দিনে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত সমাবেশে শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করেছে। যেদিন লগি-বৈঠার তাণ্ডবে দেশ, রাজনীতি, সমাজ তার পথ হারিয়েছিল। সেদিন মানবতার মৃত্যু হয়েছিল।
২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যাদের হত্যা করা হয়েছে প্রত্যেকটি ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে (রমনা) ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের লগি-বৈঠার তাণ্ডবের প্রতিবাদে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মু. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যথাক্রমে- মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আবদুল হালিম ও এডভেঅকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য যথাক্রমে- সাইফুল আলম খান মিলন, মো. আব্দুর রব, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ নেতারা।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মুফতি ফখরুদ্দীন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের সেক্রেটারি রাশেদ খান, হেফাজতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমির মুফতি এজহারুল ইসলাম চৌধুরীসহ জাতীয় নেতারা।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে শহিদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ যে অপরাধ করেছে তা তাদের পালানোর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়েছে। এখন আওয়ামীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। এই অন্তর্বতীকালীন সরকার হয়তো তাদের বিচার শেষ করতে পারবেন না; কিন্তু শুরুটা তাদেরই করতে হবে। আওয়ামী লীগ কাল্পনিক অভিযোগ দাঁড় করিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের বিচারিক হত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, পুরো জাতিকে তারা হত্যার উদ্দেশ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। পুরো জাতি ছিল একদিকে আর আওয়ামী লীগ তার শরিক ১৪ দলকে নিয়ে ছিল জনগণের বিপরীত দিকে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে কিংবা ভোটে কোনোটাতেই বিশ্বাসী নয়। তারা ভিনদেশীদের সহায়তায় ক্ষমতা দখলে বিশ্বাসী।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ থেকে ৭৫ সালে বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম, একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, খুন, গুম, ভোট ডাকাতির ইতিহাস রচনা করেছে। মানুষ তার শাসনামলে জুলুম নির্যাতনে দিশেহারা ছিল। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে, তওবা করে, রাজনীতির ময়দানে একবার সুযোগ ভিক্ষা চেয়ে রাজনীতির মাঠে জনগণের দয়ায় এসেছে। আসার পর শেখ হাসিনা আবার দেশ ও জনগণকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ভারতের মদদে বাংলাদেশকে কারাগারে পরিণত করেছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আগে আমাদের দাবি ছিল হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ চাই। এখন দাবি হচ্ছে আওয়ামী লীগ মুক্ত বাংলাদেশ চাই। আওয়ামী লীগের গুপ্তচর পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনীসহ প্রশাসনের স্তরে স্তরে রয়ে গেছে। এদের বহাল রেখে প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। আওয়ামী লীগের দোসররা প্রশাসনে থেকে প্রতিদিন নতুন নতুন থিউরি বের করে।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবি জানান।