October 5, 2021
পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুইজনের ফাঁসি কার্যকর

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই বান্ধবী ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি আজিজুল ওরফে আজিদ ওরফে আজিজ (৫০) ও মিন্টু ওরফে কালুর (৫০) ফাঁসি কার্যকর করা হয় সোমবার রাতে। পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

আজিজুল ওরফে আজিদ ওরফে আজিজ (৫০) ও মিন্টু ওরফে কালুর বাড়ি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামে। জানাজা শেষে ওই গ্রামেই পাশাপাশি তাদের দাফন করা হয়।

ফাঁসি কার্যকরের পর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার ‍তুহিন কান্তি খান বলেন, সোমবার রাত ১০টা ৪৫ মিনিট ও ১০ টাকা ৫০ মিনিটে আজিজ ও কালুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এ সময় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, সিভিল সার্জন, চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন।

পরে তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়। স্থানীয় খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পরিবারের ৭ সদস্য কারাগারে আসেন আজিজ ও কালুর লাশ নিতে। এ সময় তাদের দুজনের জন্য পৃথক দুটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল।

ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরিবারের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের সময় কালু ও আজিজুল সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে কাঁদতে থাকেন। দুজনের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে লাশ আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। রাতেই তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হবে।

কারাসূত্রে জানা গেছে, দুই খুনির ফাঁসি কার্যকরে রাতে একে একে কারাগারে প্রবেশ করেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার, সিভিল সার্জন দিলীপ শেখ আবু শাহীন ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান। রাতে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুই আসামিকে গোসল করানোর পর তাদের তওবা পড়ান কারা মসজিদের ইমাম। রাতেই স্বজনদের সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের পর তাদের খাবার খাওয়ানো হয়।

এর পর তাদের রায় পড়ে শোনানো হয়। নিম্ন আদালতের রায়, আপিল এবং রাষ্ট্রপতির ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি তাদের জানানো হয়। পরে তাদের জমটুপি পরিয়ে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়া হয়। সোমবার রাত পৌনে ১১টায় প্রথমে মিন্টু ওরফে কালু এবং এর পাঁচ মিনিট পর একই গ্রামের আজিজ ওরফে আজিজুলের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

ফাঁসি কার্যকরে জল্লাদ কেতু কামার, মশিয়ার রহমান, লিটু হোসেন, আজিজুর রহমান ও কাদের অংশ নেন। ফাঁসি কার্যকরের পর সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসক টিম তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এর পর ফরেনসিক টিম ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জানা যায়, ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর আলমডাঙ্গা থানার জোড়গাছা গ্রামের কমেলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ফেলে রাখা হয় রায়লক্ষ্মীপুর মাঠে। এ ঘটনায় খুনের পরদিন নিহত কমেলা খাতুনের মেয়ে নারগিস বেগম আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুইজনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর দুজন হলেন একই গ্রামের সুজন ও মহি।

মামলা বিচারাধীন অবস্থায় মারা যান আসামি মহি। ২০০৭ সালের ২৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সুজন, আজিজ ও মিন্টুকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এরপর আসামিপক্ষের লোকজন হাইকোর্টে আপিল করেন। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখেন এবং আরেক আসামি সুজনকে খালাস দেন। ২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান খালাসপ্রাপ্ত সুজন।

চলতি বছরের ২৭ জুলাই তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। আবেদন নামঞ্জুর সংক্রান্ত চিঠি গত ৮ সেপ্টেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষকে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর ফাঁসির রায় কার্যকরের দিন নির্ধারণ করে কারা কর্তৃপক্ষ।

২০০৭ সালের ১০ আগস্ট চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগার থেকে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত এই দুই আসামিকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এতদিন এখানেই বন্দি আছেন তারা।

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --