April 27, 2019
শ্রীলঙ্কা হামলায় ভারত-ইসরাইল যোগসাজস উড়িয়ে দেয়া যায় না

সাউথ এশিয়ান মনিটর : শান্তিপ্রিয় দেশ শ্রীলঙ্কা দীর্ঘ বিরতির পর সন্ত্রাসবাদের শিকারে পরিণত হয়েছে। অনেক শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশের মদতপুষ্ট ও মগজধোলাইয়ে স্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোর কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধের ধকল কাটিয়ে দেশটি যখন সবেমাত্র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে যাচ্ছে, তখনই এই অবস্থার শিকার হলো।

শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যার আট ভাগ মুসলিম। তবে তারা অর্থনীতিতে প্রায় ২৫ ভাগ ভূমিকা রাখে। ফলে তারা দেশটিকে বোমায় উড়িয়ে দেবে, তেমনটা প্রত্যাশিত নয়। শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে যে বিস্ফোরণে ৩০০ জন নিহত হয়েছে, প্রায় ৫০০ জন আহত হয়েছে, সেটিকে বিশ্বজুড়ে থাকা ইসলামফোবিয়ার অংশ বলা যায়।

ইস্টার ডেতে শ্রীলঙ্কায় যে বোমা হামলা হলো, তার নজির রয়েছে সামান্যই। দেশটি গৃহযুদ্ধের সময় তামিল টাইগারদের আত্মঘাতী বোমা হামলার শিকার হয়েছে অনেকবার। তবে এবার যে মাত্রায় ক্ষতি হয়েছে ও যেভাবে সমন্বিত হামলা চালানো হয়েছে, তাতে করে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের শ্রীলঙ্কা বিশেষজ্ঞ অ্যালেন কিনান বলেন, শ্রীলঙ্কা এ ধরনের সমন্বিত, বহুসংখ্যক ও উচ্চ হতাহতের এ ধরনের হামলা আর কখনো দেখেনি। আমি কোনোভাবেই মনে করতে পারছি না যে এটি শ্রীলঙ্কার বিষয়। এতে স্থানীয় ইস্যুতে নয়, বৈশ্বিক কারণ সম্পৃক্ত রয়েছে। এটা ভিন্ন ধরনের খেলা।

সন্ত্রাসবাদবিষয়ক কানাডাভিত্তিক আরেক বিশেষজ্ঞ অমরনাথ আমারাসিনগম বলেন, সন্ত্রাসবাদের প্রকৃতি ও স্থান নির্বাচন বলছে যে হামলাগুলো পুরোপুরি স্থানীয় বিষয় ছিল না। হামলা যদি স্থানীয় কারণে হতো, তবে টার্গেট করা হতো বৌদ্ধদের। যে খ্রিস্টানদের সহিংসতায় কখনোই টার্গেট করা হতো না, তাদের ওপরই চালানো হয়েছে এই হামলা।

পাকিস্তানও গত সপ্তাহে একই ধরনের হামলার শিকার হয়েছে। তা হয়েছে বালুচিস্তানে। ভারত নিজেই স্বীকার করেছে, এখানে সে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছে। স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, একই সপ্তাহে শ্রীলঙ্কায় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শ্রীলঙ্কার মুসলিমদেরকে সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্পৃক্ত করে কাশ্মীরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যার যৌক্তিকতার প্রতি বিশ্বের সমর্থন পেতে চাচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত ও ইসরাইল দুদেশেই নির্বাচন হয়েছে বা হচ্ছে। ইসরাইলে নির্বাচন শেষ হয়েছে এবং প্রত্যাশামতো মুসলিমবিরোধী ও মার্কিন মিত্র বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তার অনুসারী নরেন্দ্র মোদিও আবারো ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছেন। মোদি গত ৫ বছরে ভারতে হিন্দুত্বাবাদী মতাদর্শভিত্তিক অবস্থান জোরদার করেছেন। মুসলিমেরা ইতোমধ্যেই ভারতের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছে।

দ্রুত বদলে যাচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র : আবারো প্রমাণিত হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে মানবিকতা ও মানবাধিকার নিয়ে সামান্যই উদ্বিগ্ন। তিনি লিবিয়িার তেলের নিয়ন্ত্রণ লাভ নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের কালোতালিকাভুক্ত এক বিদ্রোহী কমান্ডারকে সমর্থন দিচ্ছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসরীয়দের পক্ষ নিয়ে। এসব স্বৈরাচারী গণতন্ত্রের পথে যেকোনো আন্দোলন শুরুতেই হত্যা করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

গৃহযুদ্ধের সময় শ্রীলঙ্কার জনগণের দুর্দশার প্রতি ন্যূনতম নজরও দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র দ্বীপদেশটিতে তাদের কোনো স্বার্থ দেখেনি। ফলে বিশ্ব রাষ্ট্রবিরোধী বিদেশী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গি গ্রুপের দয়ার ওপর শ্রীলঙ্কাকে ফেলে দেয়।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেকোনো মূল্যে পাকিস্তানের ক্ষতি করতে বদ্ধপরিকর। তার যুদ্ধংদেহী নীতির প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি দিচ্ছে কৌশলে সমর্থন। বিশ্বের শান্তিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর সাথে তারা দ্বিমুখী খেলা খেলছে। এর ফলে ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছে।

শ্রীলঙ্কায় যেভাবে পরিকল্পনা করে নিখুঁতভাবে হামলা চালানো হয়, তাতেই প্রমাণ হয় যে শ্রীলঙ্কা বা অন্য কোথাও কোনো ধর্মীয় গ্রুপ এত দক্ষ নয় বা আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ নয়। দুটি জাকজমকপূর্ণ চার্চ ও তিনটি বড় হোটেলে সর্বোচ্চ সংখ্যক হতাহত নিশ্চিত করার এই হামলাটি ৯/১১ ও মুম্বাই তাজ হোটেল হামলার চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়।

এতে প্রমাণিত হয় যে অত্যন্ত প্রশিক্ষিত ও কৌলগতভাবে সুসংগঠিত কোনো গ্রুপ তার লক্ষ্য হাসিলের জন্য এই হামলা চালিয়েছে। ভারতের দুর্বল প্রতিবেশির ওপর এ ধরনের ঘৃণ্য হামলার পেছনে কে রয়েছে, তার নাম প্রকাশ করা নিষ্প্রয়োজন।

শ্রীলঙ্কা ও এর জনগণের প্রতি বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর কোনো আগ্রহ নেই। ভারত কয়েক দশক ধরে শ্রীলঙ্কাকে তার সন্ত্রাসবাদের প্রজননক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।

সময় এসেছে ভারতের মুসলিমবিরোধী আতঙ্কজনক মানসিকতা এবং পুরো বিশ্বের ধর্মীয় ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়া প্রতিরোধ করা নিয়ে কৌশল পুনঃবিন্যাসের।

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --