September 26, 2018
১৪ দল-বিএনপি মুখোমুখি

আলোপরশ নিউজ;

রাজনীতিতে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। এবার উত্তেজনার বারুদ জমতে শুরু করেছে একই দিনে রাজধানীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও বিএনপির সমাবেশ-জনসভা ডাকার ঘটনায়। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেল ৩টায় মহানগর নাট্যমঞ্চে ১৪ দল নাগরিক সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে ওই দিন দুপুর ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অথবা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করার কথা জানিয়েছে বিএনপি। হঠাৎ করেই দুই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের এমন মুখোমুখি অবস্থানের কারণে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে জনমনে। সবারই প্রশ্ন- কী হবে ২৯ সেপ্টেম্বর?

নাগরিক সমাবেশকে ঘিরে ২৯ সেপ্টেম্বরের আগে থেকেই ঢাকা দখলের ঘোষণা দিয়েছে ১৪ দল। অন্যদিকে, এখন পর্যন্ত জনসভা করার অনুমতি না মিললেও ১৪ দলের আগাম হুঁশিয়ারিতে শঙ্কা প্রকাশ করে এটিকে নির্বাচন থেকে বিরোধী দলকে দূরে রাখার সরকারি চক্রান্ত হিসেবে অভিহিত করেছে বিএনপি।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি-জামায়াতসহ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির অপরাজনীতি ও ষড়যন্ত্রমূলক রাজনীতি প্রতিহত করার লক্ষ্যে জনগণকে সজাগ ও সংগঠিত করতে এই সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, একই দিন দুপুর ২টায় রাজধানীর সোহওরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভা করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত প্রশাসন থেকে বিএনপিকে জনসভা করার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।

১৪ দলের এই নাগরিক সমাবেশ অবশ্য বিএনপির সমাবেশের আগেই ডাকা হয়েছে। গত সোমবার ১৪ দলের বৈঠকে ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ওই নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেওয়া হয়। আর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রথমে ২৭ সেপ্টেম্বর জনসভা করার ঘোষণা দেওয়া হলেও গতকাল মঙ্গলবার জানানো হয়, দু’দিন পিছিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর এই জনসভা করবে তারা।

এদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকে জনসভার তারিখ পিছিয়ে ১৪ দলের সমাবেশের দিনই ঘোষণা করার কারণ সম্পর্কে সরাসরি কিছু বলা হয়নি দলটির পক্ষ থেকে। তবে, প্রশাসন ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকেই সরকারি ছুটির দিনে জনসভা করার অনুরোধ করা হয়েছিল বলে বিএনপির একটি সূত্র দাবি করেছে। ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় জনসভাটি ওই তারিখে নির্ধারণ করা হয়েছে।

একই দিন দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি সমাবেশ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যেই ১৪ দলের ঢাকা দখলের ঘোষণা বাড়তি উত্তেজনা ছড়িয়েছে। গতকাল ১৪ দলের প্রস্তুতি সভায় ক্ষমতাসীন এই জোটের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ২৯ সেপ্টেম্বরের আগে থেকেই ঢাকা দখলে রাখবেন তারা। তিনি বলেন, আগে থেকেই ঢাকা আমাদের দখলে ছিল। ইনশাল্লাহ আগামীতেও ঢাকা আমাদের দখলেই থাকবে। শুধু ঢাকা নয়, সারা বাংলাদেশ শেখ হাসিনার দখলে থাকবে।

১৪ দল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যে কোনো চক্রান্তের বিরুদ্ধে পাড়া-মহল্লায় সজাগ থাকতে হবে। এলাকায় এলাকায় প্রস্তুত থাকতে হবে। যেন ওই অপশক্তি মাঠে নামতে না পারে। চক্রান্তকারীরা মাঠে নামবে। ১৪ দল দেখবে কারা মাঠে নামবে, আর কে নামবে না? ওদের মাঠে প্রতিহত করবেন, রাস্তায় প্রতিহত করবেন।

এদিকে, ২৯ সেপ্টেম্বরের আগে থেকেই ঢাকা দখলে রাখার ১৪ দলের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সমকালকে বলেন, ১৪ দলের ঢাকা দখলে রাখার ঘোষণায় সবার মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এতে মনে হয় সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সংঘাত সৃষ্টি করতে চায়, যাতে বিরোধী দল নির্বাচনে আসতে না পারে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির জনসভা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আর ১৪ দলের সমাবেশ মহানগর নাট্যমঞ্চে হলে দুটি কর্মসূচির স্থানের দূরত্বের কারণেই সংঘাতের কোনো আশঙ্কা দেখছি না।

গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী জানান, এর আগে তারা ঘোষণা করেছিলেন ২৭ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিএনপির জনসভা হবে। এখন দু’দিন পিছিয়ে এই জনসভা ২৯ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করবেন তারা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি পাওয়া গেছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমতি এখনও পাইনি। তবে আশা রাখছি, পাব।

তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একজন উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল সমকালকে জানান, ২৯ সেপ্টেম্বর পল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি পাবে না বিএনপি। তবে তারা চাইলে ইনডোরে জনসভা করতে পারে। সেটা হতে পারে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। তবে ২৯ সেপ্টেম্বর ছাড়া অন্য কোনো তারিখে পল্টন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি জনসভা করতে চাইলে ‘সার্বিক পরিস্থিতি’ বিবেচনায় অনুমতি দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সংশ্নিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র সমকালকে এসব তথ্য জানায়।

কেন এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা পল্টনে জনসভা করার অনুমতি মিলছে না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ডিএমপির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, চলতি মাসের ১ তারিখে বিএনপিকে পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তখন ওই সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এ কারণে সেখানে আপাতত সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এক মাসের মধ্যে বিএনপির রাজপথে আরেকটি সমাবেশ করার যৌক্তিকতা নিয়েও সন্দিহান নীতিনির্ধারকরা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। সেখানে তাদের অনুমতি না দিয়ে মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুমতি দেওয়া হয়। একই দিন চাইলে বিএনপি ঘরোয়া পরিবেশে সমাবেশ করতে পারবে। এ ছাড়া ২৮ সেপ্টেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের একটি কর্মসূচি রয়েছে। একদিন পরই একই ভেন্যুতে আরেকটি কর্মসূচি রাখতে চায় না ডিএমপি।

এ বিষয়ে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসি আনোয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর বিএনপি পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চায়- এ ধরনের কোনো চিঠি তারা এখনও পাননি। সাধারণত ডিএমপি কার্যালয়ে অনুমতি চেয়ে আবেদন করলে সংশ্নিষ্ট এলাকার ডিসি হিসেবে ওই আবেদনের অনুলিপি তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হোসেন সরদার বলেন, সোহরাওয়ার্দীতে ২৯ সেপ্টেম্বর জনসভা করার কোনো চিঠি তিনি পাননি।

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --