July 19, 2019
হামলাকারির মিথ্যা মামলায় সাংবাদিক গ্রেপ্তার: কৃষি ব্যাংকের ডিজিএমকে টানা হেঁচড়া

বিশেষ প্রতিনিধি: কৃষি ব্যাংকের ডিজিএম ও এক সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে সদর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই সাংবাদিককে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পর ফরোয়াডিং ছাড়াই আদালতে প্রেরণ করা হয়। এরপর ওই মামলার আরেক আসামী প্রবীন ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারের জন্য শারীরিকভাবে টানা হেচড়ার পাশাপাশি লাঞ্ছিত করারও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সদর থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান ও কাটিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ তসলিমের বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।
প্রাপ্ততথ্যে জানা যায়, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সদস্য ও খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক তথ্যের জেলা প্রতিনিধি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম শাওনের বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কুয়েতে চাকরি করাকালিন কিছু জমি কেনেন তারই আত্মিয় সদর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম।
গত ১১ জুলাই সকাল ৮টার দিকে সকলের ব্যবহৃত রাস্তার মাঝখান দিয়ে পানির ড্রেনের জন্য রাস্তা খোড়াখুড়ি করে আনারুলের লোকজন। এ সময় সাংবাদিক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম শাওন রাস্তার মধ্যখানের পরিবর্তে ধারদিয়ে রাস্তা খোড়ার কথা বললে ক্ষুব্ধ হয় আনারুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা। তারা শাওনকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে চলে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আহত শাওনকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করা হয়। এ ব্যাপারে থানায় ৪ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও করেন শাওন। সদর থানার এসআই আব্দুর রশিদও যান ঘটনাস্থলে। পরে প্রেসক্লাবের কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বিষয়টি তুচ্ছ হিসেবে উল্লেখ করে মিটমিমাংসা করে দেওয়ার কথা বললে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ আশ্বস্থ হন। এভাবেই বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক তছলিমের নেতৃত্বে পাঁচজন পুলিশ শাওনের বাড়িতে যেয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ তাৎখনিক সদর থানায় যোগাযোগ করলে সাত সকালে ফরোয়ার্ডিং ছাড়াই শাওনকে কোটে পাঠানো হয়। বেলা ১১টার দিকে তাকে গত ১২ জুলাই আনারুলের দায়ের করা মামলার আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে ফরোয়ার্ডিং পাঠানো হয়। এরপরপরই মামলার বিষয়টি জানাজানি হয়।
এদিকে গতকালই সাংবাদিক শাওনের জামিনের আবেদন করা হয় বিজ্ঞ আদালতে। কিন্তু দীর্ঘ সময় খোজাখুজি করেও ঐ মামলার নথি পাওয়া যায়নি। পরে বিজ্ঞ বিচারকের নির্দেশে মামলার নথি খুজে বের করার পর জামিন শুণানী করা হয়। শুণানী শেষে বিজ্ঞ আদালত শাওনকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। কাল্পনিক এই মামলার অপর আসামী করা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সাতক্ষীরা অঞ্চলের ডিজিএম শাওনের ভগ্নিপতি গোলাম মোস্তফাকে।
এদিকে শাওনকে সম্পূর্ণ মিথ্যা একটি মামলায় গ্রেপ্তারের ঘটনায় সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে গত ১১ জুলাই শাওনের দায়ের করা অভিযোগটি গতকাল বিকালে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। রাতে ঐ মামলার ১নং আসামী আনারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একজন সরকারি ব্যাংকের ডিজিএম পদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ সাংবাদিক সৈয়দ রফিকুল ইসলাম শাওনকে আসামী করে জমি-জমার বিরোধকে চুরি ও মারামারি বানিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান মামলা নেয়ায় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, গত ১১ জুলাই বাড়ির রাস্তায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টির প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সাংবাদিক শাওনকে তার ভাইজি জামাই কুয়েত প্রবাসী আনারুল বেধড়ক মারপিট করে। এ ব্যাপারে সদর থানায় শাওন ঐদিন লিখিতভাবে অভিযোগ করলে ওসির নির্দেশে এসআই রশিদ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান। বিষয়টি ওসি মোস্তাফিজুর রহমানকে জানানো হলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। তারপরে মামলাটি রেকর্ড না করে প্রতিপক্ষ কুয়েত প্রবাসী জামায়াতের অর্থদাতা ভাইজি জামাইকে দিয়ে একজন সরকারি ব্যাংকের ডিজিএম ও সাংবাদিক শাওনকে আসামী করে গত ১২ জুলাই একটি মামলা রেকর্ড করেন ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। ঘটনার ৭দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে সাংবাদিক শাওনকে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসেন এসআই তছলিম। সাংবাদিরা বিষয়টি ওসির কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের সুপারিশে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তা অস্বীকার করে ওসিকে জানান মামলা নিতে বা গ্রেপ্তার করতে আপনাকে বলা হয়নি। শুধুমাত্র ১৮ জুলাই উভয় পক্ষকে ডেকে মিমাংসা করতে বলা হয়েছে। এতে মনে হয় ওসি মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের সাথে আওয়ামী লীগের বিারোধ সৃষ্টি করতে চাইছেন। বিবৃতিতে এহেন কর্মকান্ডে তীব্র নিন্দা জানায় প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ।
এসব ব্যাপারে কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক তছলিম আনারুলের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে সাংবাদিক শাওনকে গ্রেপ্তার ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে মিথ্যা মামলা রেকর্ডের কথা অস্বীকার করে বলেন, মামলা রেকর্ড করেছেন ওসি সাহেব, তিনি ওসি সাহেবের নির্দেশ পালন করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, এ ধরণের কোন ঘটনা তার জানা ছিল না। আসামী গ্রেপ্তার হয়েছে কি না তাও তিনি জানেন না। এক পর্যায়ে জানার পর বিষয়টি মিটমাট করে দেয়ার কথা ওসিকে বলেছেন তিনি।
সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান আর্থিক সুবিধা নিয়ে মামলা রেকর্ডের কথা অস্বীকার করে বলেন, একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ১১ জুলাই শাওনের দায়েরকৃত অভিযোগটি গতকাল ১৮ জুলাই বিকালে এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং ঐ মামলার ১নং আসামী আনারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।patradoot.net

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --