আলোরপরশ :  বন্দিদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথোপকথন রেকর্ড করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, একটি নীতিমালার ভিত্তিতে এসব মনিটরিং করা হবে। সিনিয়র জেল সুপার/ জেল সুপারের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি কমিটি সার্বিক বিষয়টি মনিটরিং করবেন। জঙ্গি, টপটেরর ও বিভিন্ন আলোচিত মামলার স্পর্শকাতর বন্দিদের এ সুবিধার বাইরে রাখা হবে। এ কারণে কারাগার থেকে মোবাইল ফোনে অপরাধে মদত দেয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। গতকাল সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে মন্ত্রী এসব তথ্য জানান। চট্টগ্রাম-৪ আসনের দিদারুল আলমের প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে কারাবন্দিদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পাইলট প্রকল্প টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে শুরু হয়েছে। টেলিফোনে কথা বলার কার্যক্রম অন্যান্য কারাগারে চালু করার জন্য ‘দেশের সকল কারাগারে প্রিজন লিংক স্থাপন’ শিরোনামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে জামালপুর-৫ আসনের মোজাফফর হোসেনের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী জানান, ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার কক্ষটি ঐতিহাসিক সাক্ষ্য হিসেবে রাখার জন্য সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ইতিহাস, ঐতিহাসিক ভবন সংরক্ষণ ও পারিপার্শ্বিক উন্নয়ন শিরোনামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারা স্মৃতি জাদুঘর এবং জাতীয় চার নেতা কারা স্মৃতি জাদুঘর-এর সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হবে। তিনি বলেন, প্রকল্পটি গত বছরের ১১ই সেপ্টেম্বর একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। একই বছরের ১লা নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন। বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে। এদিকে আগামী ৫ বছরে আরো ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। নেত্রকোনা-৫ আসনের ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে জনবল বৃদ্ধির বিষয়টি পরিকল্পনায় রয়েছে। গত ২০শে জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে আগামী ৫ বছরে পুলিশের জনবল পর্যায়ক্রমে আরো ৫০ হাজার বৃদ্ধির বিষয়ে মত প্রকাশ করেন। মন্ত্রী জানান, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বর্তমান সরকারের পূর্ববর্তী দুই মেয়াদে অর্থাৎ (২০০৯-২০১৩) বাংলাদেশ পুলিশে বিভিন্ন পদবির মোট ৩৩ হাজার ১০২টি পদ সৃজন করা হয়েছে। পরবর্তী দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থাৎ (২০১৪-২০১৮) বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ৫০ হাজার পদ সৃজনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ৫০ হাজার পদের মধ্যে পুলিশের বিদ্যমান বিভিন্ন ইউনিটের কাঠামো সংস্কারসহ বিভিন্ন পদবির মোট ৪৮ হাজার ২৯৯টি পদ সৃজন সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য ও সম্পদ রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ফেনী-২ আসনের নিজামউদ্দিন হাজারীর প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও সম্পদ রক্ষায় জলদস্যু/বনদস্যুদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। অভিযানকালে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের ফলে জলদস্যু/বনদস্যুদের অনেকেই কোণঠাসা হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করছে। চট্টগ্রাম-৩ আসনের মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বর্তমানে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। সে নীতি বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও কোস্টগার্ডসহ অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা মাদক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিরলসভাবে কাজ করছে।