October 1, 2018
এসকে সিনহার বিরুদ্ধে নাজমুল হুদার মামলা দায়ের

আলোরপরশ নিউজঃ    সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টের (বিএনএফ) আহ্বায়ক, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে তিনি সোমবার রাজধানীর শাহবাগ থানায় এই মামলা করেন।

শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান জানান, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত ও আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এ জন্য মামলাটি দুদকে পাঠানো হয়েছে। ডিএমপির মিডিয়া সেন্টার থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিচারপতি সিনহার বই প্রকাশের পর তুমুল আলোচনার মধ্যে তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনার একটি অভিযোগের অনুসন্ধানে নামার কথা জানিয়েছিল দুদক। এরপর বিকালে ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদার মামলাটির খবর প্রকাশ পায়।

 

আরো দেখুন : একটা বই নিয়ে তাদের এত ভয় কেন : 

 

বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিবিসিকে বলেছেন, এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি’ বইটি তিনি নিজে লিখে নিজের উদ্যোগে প্রকাশ করেছেন, অন্য কারো এতে কোনো ইন্ধন নেই।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বইটি প্রকাশের পেছনে অনেকের ইন্ধন, উদ্যোগ এবং সাহায্যের যে কথা খোলাখুলি বলেছেন, বিচারপতি সিনহা তা প্রত্যাখ্যান করেন।

“প্রধানমন্ত্রী যদি জানেন, তাহলে তা প্রকাশ কেন করছেন না? সাংবাদিকদের তা বের করতে বলছেন কেন?”

বিচারপতি সিনহা বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় লেখা নিয়েও তাকে একই ধরনের কথা শুনতে হয়েছে। “তারা কখনো বলেছে আইএসআই এই রায় লিখে দিয়েছে, কখনো বলেছে ড. কামাল হোসেন লিখে দিয়েছেন। আবারো এখন এই বই নিয়ে একই প্রশ্ন।”

তিনি বলেন, বইটিতে তার ব্যক্তিগত সব অভিজ্ঞতা তিনি লিখেছেন যেটা অন্য কারো পক্ষে লিখে দেয়া সম্ভব নয়।

“বইটিতে কিছু ভুল রয়ে গেছে, মুখবন্ধে আমি তার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছি। অন্য কেউ যদি এডিট করে দিত, তাহলে এই ভুলগুলো থাকত না।”

“আসলে স্বৈরশাসনে যারা মনোনিবেশ করেন, হিটলারের ইতিহাস যদি দেখেন, তার গোয়েন্দারা মিথ্যাকে সত্য বানানোর চেষ্টা করত। সরকারের যে সব বাহিনী এখন আছে, তাদের কথাই এখন প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) মুখে ফুটে ওঠে।”

“উনি কেন এত ভয় পাচ্ছেন, এটা তো আত্মজীবণীমুলক একটি বই।”

বিচারপতি সিনহার বইটি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার ঢাকায় বলেন, ”ক্ষমতা হারানোর জ্বালা থেকে বিচারপতি এস কে সিনহা বই লিখে মনগড়া কথা বলছেন। ক্ষমতায় যখন কেউ থাকে না, তখন অনেক অন্তরজ্বালা বেদনা থাকে। এই অন্তরজ্বালা থেকে অনেকে অনেক কথা বলেন।”

”উনি প্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায়, এখন যা বলছেন বইতে, সেটা বলার সাহস কেন একজন বিচারপতির থাকে না – এটা নৈতিকতার প্রশ্ন,” বলছেন মি. কাদের।

রাজনৈতিক আশ্রয়
শনিবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিচারপতি সিনহা জানান, দেশে তার জীবনের ঝুঁকির কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।

রোববার টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিবিসির কাছেও তার রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, অনেক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি এই আশ্রয় চেয়েছেন। “আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি হিসাবে এখানে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়াটা আমাদের দেশে, সরকার এবং মূল্যবোধের জন্য একটা প্রশ্ন…কিন্তু আমার জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে”

কেন তিনি মনে করছেন দেশে তার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে? বিবিসির এই প্রশ্নে বিচারপতি সিনহা বলেন, জঙ্গি বিষয়ক বিভিন্ন মামলার রায় দেওয়া নিয়ে একদিকে ধর্মীয় জঙ্গিদের কাছ থেকে হুমকি এবং অন্যদিকে সেনা গোয়েন্দাদের কাছ থেকে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে বলে তাকে বিদেশে আশ্রয় চাইতে হয়েছে।

“আমাকে মারার জন্য জঙ্গিরা একাধিকবার চেষ্টা করেছে। আমার স্ত্রীর ওপর হামলা হয়েছে। আমার গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে…আমার দুটো কুকুর পর্যন্ত তারা মেরে ফেলেছিল…।”

“অন্যদিকে সরকার আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছে, ডিজিএফআই আমাকে জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে, তারা আমাকে হুমকি দিয়েছে।”

বিচারপতি সিনহা তার সাক্ষাৎকারে বার বার ঘুরে ফিরে বলার চেষ্টা করেছেন তাকে নিয়ে কিছু মানুষ শেখ হাসিনাকে বিভ্রান্ত করেছে, ভুল বুঝিয়েছে। আবার একইসাথে গণতন্ত্র এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে শেখ হাসিনার নানা ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।

“আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র আনতে কেয়ারটেকার সরকারের জন্য লড়াই করেছিল, কেয়ারটেকারের মধ্য দিয়েই তারা ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় এসেই তিনি সুর পাল্টে ফেলেন।”

এখন কেন তিনি এত সরব হলেন?
দেশে যখন একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, সে সময় এতদিন পর তিনি কেন এই বই প্রকাশ করলেন? তিনি কি কাউকে রাজনৈতিক সুবিধা দিতে চেয়েছেন?

এই প্রশ্নে বিচারপতি সিনহা বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতিতে কে জিতলো, কে হারলো তা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। “সরকার আমার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করেছে, আমি শুধু তা প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। যখন শেষ করতে পেরেছি তখন প্রকাশ করেছি। এতে বিরোধী দল যদি কোনো সুবিধা পেয়ে থাকে, তাতে আমার কী লাভ?”

“তারা (সরকার) এত ভয় পাচ্ছে কেন? তারা তো উন্নয়ন করেছে। দেশের অর্থনীতি ভালো, আমি নিজেও তা স্বীকার করি। তাহলে আমার একটা বই নিয়ে এত ভয় পাচ্ছে কেন? তাহলে তারা যে দুর্নীতি করেছে সেটা কি উন্নয়নকে ছাপিয়ে যাবে? এই কারণেই কি তারা ভয় পাচ্ছে?”

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --