September 26, 2018
মালদ্বীপের নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীর জয় : কী ভাবছে ভারত
আলোপরশ নিউজ; অগ্নিগর্ভ প্রতিবেশী বলয়ের মধ্যে বসে থাকা ভারতের কাছে সুখবর নিয়ে এলো মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সে দেশের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন ভোটে হেরেছেন। চীনের জন্য দরজা খুলে দিয়ে ঘোষিতভাবেই ভারতের সঙ্গে পাঞ্জা কষছিলেন তিনি। তার পরাজয়ে উচ্ছ্বাস গোপন করেনি নয়াদিল্লি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমাবার ফোন করে অভিনন্দন জানান প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী প্রার্থী ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিকে। এর আগে ভোরেই তাকে অভিনন্দন জানায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বলা হয়, ‘‘গণতন্ত্রের মূল্য এবং আইনের শাসনের প্রতি মালদ্বীপবাসীদের সুদৃঢ় দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করল এই নির্বাচন।’’ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরো বলেছে, ‘‘প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার দেয়ার ভারতীয় নীতি মেনে মালদ্বীপের সঙ্গে সহযোগিতা ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো গভীর করতে আমরা উদ্গ্রীব।’’ পরে মোদিও একই কথা জানান সলিকে। সলিও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে চান বলে জানিয়েছেন। ইয়ামিন জামানায় মালদ্বীপ বারবার ভারতের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে। ভারতের দু’টি সামরিক হেলিকপ্টার ফিরিয়ে নেয়ার জন্য প্রবল চাপ তৈরি করেছিলেন ইয়ামিন। সেখানে উপস্থিত ৫০ জন ভারতীয় সেনাকর্মীকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কার্যত নির্দেশ জারি করেছিল ইয়ামিন সরকার। পঁচিশ বছরের এমপি সলির সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘদিনের। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ক্রমশ পরিস্থিতি ইয়ামিনের অভিযোগ ছিল, ভারত গোপনে সলিকে সাহায্য করছে। নয়াদিল্লি আমল দেয়নি সেই অভিযোগে। তবে ইয়ামিন ফের জিতে এলে নিয়ে সাউথ ব্লকের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ ছিল বলেই মনে করছেন ভারতীয় কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা। ইয়ামিনের আমলে মালদ্বীপে বিশাল এলাকা জুড়ে সামরিক ঘাঁটি তৈরির প্রক্রিয়া বেইজিং অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এটা ঘটনা ভারত মহাসাগরে নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে ভারত ও চীন, উভয় দেশই মরিশাস, সেশেলস ও মালদ্বীপের মতো দেশগুলোকে হেলিকপ্টার, টহলদারি বোট ও আরো অনেক কিছু দিয়ে সাহায্য করে এসেছে। সাহায্যের মোড়কে নিজেদের প্রতিরক্ষা নজরদারি এবং ঘাঁটি তৈরিই এ সবের প্রকৃত উদ্দেশ্য। কিন্তু ইয়ামিন জামানায় এই কাজে মালদ্বীপে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল ড্রাগনের দেশ। যে মালদ্বীপে ২০১১ সাল পর্যন্ত চীনের দূতাবাসও ছিল না, আজ সেখানকার রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রতিটি পদক্ষেপে জড়িয়ে রয়েছে চীন। গত ডিসেম্বরে সাউথ ব্লকের রক্তচাপ দ্বিগুণ করে মালদ্বীপের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে চীন। মালদ্বীপও চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পে সমর্থন জানিয়েছে। সে দেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ভারতীয় সংস্থাগুলোকে হটিয়ে চীনা সংস্থাগুলো জায়গা করে নিয়েছে। ইয়ামিনের পরাজয় তাই ভারত-চীন কূটনৈতিক যুদ্ধে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নয়াদিল্লিকে অনেকটাই সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে দিলো বলে মনে করছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা আবদুল্লাহ ইয়ামিনের ভরাডুবি সোলিহ মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থী ইব্রাহিম মোহামেদ সোলিহ। গতকাল সোমবার প্রকাশিত ফলাফলের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে। দেশটির ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন। নিউজ ওয়েবসাইট মিহারুর খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সোমবার রাত ১২টা ৪৩ মিনিটে ৪৭২টি ব্যালট বাক্সের মধ্যে ৪৪৬টির ভোট গণনা শেষে দেখা গেছে বিরোধীদলীয় নেতা সোলিহ ১৬ দশমিক ছয় শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন। এসব ফলাফল আসার পর রাজধানী মালেতে ইবু নামে পরিচিত সোলিহ বলেছেন, ‘সুখের মুহূর্ত এটি, আশার মুহূর্ত। ব্যালট বাক্সে জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলন ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘তাদের বার্তা জোরালো ও পরিষ্কার। মালদ্বীপের জনগণ পরিবর্তন, শান্তি ও ন্যায়বিচার চায়। প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনকে জনগণের ইচ্ছা মেনে নিয়ে সংবিধান অনুযায়ী নির্বিঘেœ ক্ষমতা হস্তান্তরপ্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি।’ সোমবার ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, তিনি বিস্ময়করভাবে আবদুল্লাহ ইয়ামিনকে পরাজিত করেছেন। সোমবার নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফলে দেখা যায়, সলিহ ৫৮.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এমন ফলাফল ঘোষণার পরপরই দেশব্যাপী বিরোধী দলের সমর্থকেরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। এ সময় তাদেরকে সলিহর মালদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) হলুদ পতাকা বহন করতে এবং রাজপথে নাচতে দেখা যায়। এ নির্বাচনে ইয়ামিনকে পরাজিত করতে সলিহ ছিলেন বিরোধী দলগুলোর একক প্রার্থী। অন্য সব বিরোধী দলের প্রধান নেতারা কারাগারে বা নির্বাসনে থাকায় রোববারের অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে আর কোনো প্রার্থী ছিল না। |
|
সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত |
e-mail: alorparosh@gmail.com- -- |