September 23, 2018
এবার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় টাইগারদের

আলোরপরশ নিউজঃ  গল্পে পড়া উঠের পিঠে চড়া সেই বেদুইনরা নাকি এখন শুধুই হোটেলের অভ্যর্থনা কক্ষের স্যুভেনিয়র বইয়ে, শহর ছাড়িয়ে হাইওয়েতে উঠলেও চোখে পড়ে না ধু ধু মরুর প্রান্তর। মরীচিকার পেছনে আর ছোটে না তারা। দুবাই এখন কংক্রিট আর ক্রেনের শহর। সরকারি ঘোষণা- ‘হ্যাপি দুবাই’-এ কোনো অসুখী মানুষ থাকতে পারবে না। কেউ ভালো নেই বললেও নাকি জরিমানা করা হয়! সত্যিই তাই। কিন্তু ফেস্টিবল সিটির হোটেল বাসিন্দাদের কয়েকজন যে কিছুতেই মন ভালো করতে পারছেন না। পরপর দুই ম্যাচে হারের পর দুঃখের অসহায়তা ও অন্তর্দহনে পথ হারিয়ে ফেলা সেই বেদুইনদের মতোই ক্লান্ত তারা।

একটি জয়ের তৃষ্ণা সারাক্ষণ তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে তেজী ঘোড়ার মতো ছুটছে আফগানরা। পারবে কি আজ এই ঘোড়াকে লাগাম পরাতে টাইগারররা। পারবেন কি মাশরাফিরা আজকের ম্যাচটি জিতে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার সুযোগটা অক্ষত রাখতে? ‘এতটা ভেঙে পড়ার কিছু নেই। আমার বিশ্বাস আমরা জয়ে ফিরবই।’ বক্তা যিনি তিনি শক্তই আছেন, অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু তার দলের কম বয়সীরা তো রীতিমতো বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন- এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখে আগে কখনও পড়তে হয়নি তাদের।

তবে এই তরুণ সেনানীদের নিয়েই আজ আবুধাবিতে লড়ে যাওয়ার পণ করেছে টাইগাররা। বিকেলের টিম মিটিংয়ে জোর দিয়ে বলা হয়েছে ‘মনের বাঘ’ দূর করতে হবে।

দুবাইয়ের ফ্লাট পিচেও কেন ১৯০টি ডট বল খেলতে হলো, আবুধাবিতে কেন ১৭০ বল ডট গেল- তা নিয়েও কোচ কিছু কথা শুনিয়েছেন। টিম ম্যানেজমেন্টের প্রত্যেকেই মনে করছেন শুধুমাত্র মানসিক ভীতির কারণেই এমনটা হচ্ছে। এটা ঠিক যে, আফগানদের দুই স্পিনার রশিদ খান ও মুজিবকে খেলতেই পারছেন না কেউ। সেই দেরাদুন থেকে এই দুই বোলারকে কীভাবে খেলতে হবে সেটাই বুঝতে পারছেন না দলের অনেকে। কিন্তু গত ম্যাচে আফগান পেসার আফতাবও যেন ‘ব্রেট লি’ হয়ে গেছেন টাইগারদের সামনে।

আজকের ম্যাচে তাই ভয়ডরহীন এবং একই সঙ্গে হিসাবী ইনিংস খেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডট বল দিয়ে পরের ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপ বাড়ানো ইনিংস যেন না খেলা হয় সেদিকেও কোচের পরামর্শ আছে। আবুধাবির পিচ দুবাইয়ের চেয়ে কিছুটা স্লো, সেখানে ২৪০-২৫০ রানও বেশ ভালো স্কোর। সেটি মাথায় রেখে পাওয়ার প্লেতে কত রান আসতে পারে, শেষ ১০ ওভারে কত আসতে পারে তার একটা খসড়া কোচ নিল ম্যাকেঞ্জির ল্যাপটপে সেভ করা আছে। কিন্তু টেবিলে খাতা-কলম শেষ করে ফেললেও মাঠে গিয়ে খেলবেন তো মিঠুন-মোসাদ্দেকরাই (যদিও মোসাদ্দেক আজকের একাদশে নাও থাকতে পারেন)।

দলের মধ্যে রান করে যাচ্ছেন তো সেই পুরনো নামগুলোই- মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ আর সাকিব। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া দলটির এখন ভীষণভাবে প্রয়োজন লিটন, শান্তদের কাছ থেকেও রানের আশা করা। ‘আসলে গেল কিছু সিরিজ ধরেই কিন্তু রান আসছে কেবল আমাদের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে। সেটা এই টুর্নামেন্টে ফেল করতেই আজ এমন অবস্থা। টপ ও লোয়ার অর্ডারেও আমাদের রান তুলতে হবে। ব্যাপারটি এমন নয় যে, আমরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে কখনও খেলিনি বা জিতিনি। ওদের আমরা হারিয়েছি। সেই বিশ্বাসটাই আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।’ সেদিন ভারতের সঙ্গে হারার পর মন খুলেই কথাগুলো বলছিলেন মাশরাফি।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচটিতে দলের শরীরী ভাষায় জয়ের ক্ষুধাটা ধরা পড়েনি। তখন অবশ্য একটা কারণ বলা হচ্ছিল এমন যে, ভারতের সঙ্গে ম্যাচের আগে শরীরের এনার্জি খানিকটা বাঁচিয়ে রাখার কৌশল ছিল। বিশ্রাম দেওয়া হয়েছিল মুশফিক আর মুস্তাফিজকে। ওই ম্যাচে লাটাই থেকে কিছুটা যে সুতো ছাড়া হয়েছিল তা সাদা চোখেও ধরা পড়েছিল। কিন্তু আজ আফগানদের নিয়ে কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার চিন্তা করাই হবে অপরাধ। কেননা আজকের ম্যাচটি হারলে কাগজে-কলমে ফাইনাল খেলার কিঞ্চিত একটা সম্ভাবনা হয়তো থাকবে; কিন্তু সেটাও দুবাইয়ে বছরে চার দিন বৃষ্টি নামার মতো ঘটনা হবে।

আফগানদের বোলিং শক্তি যে অনেকটা গভীর তা সাকিব-মাশরাফি হাত তুলে স্বীকার করতে রাজি এবং করেছেনও। ‘বর্তমান পরিস্থিতি ও পরিপ্রেক্ষিতে আফগানিস্তান অনেক ভালো খেলছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে আমরাই এগিয়ে। ওদের বোলিং শক্তি অনেক ভালো। কিন্তু আমাদের ব্যাটিংটা ভালো।’ গতকাল ঘুম থেকে উঠেই ঢাকা থেকে আসা ক্যামেরাগুলোর সামনে বলছিলেন সাকিব। এটাও বলছিলেন আফগানরা যত বেগেই ছুটুক না কেন অভিজ্ঞতায় কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে। আর কঠিন পরিস্থিতিতে এই ‘অভিজ্ঞতা’ই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে।

হয়তো সেই অভিজ্ঞতার কারণেই ঢাকা থেকে পত্রপাঠে দুবাই এসেছেন সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস। যদিও আজ তাদের একাদশে রাখা হবে কি-না তা নিয়ে টিম ম্যানেজমেন্টের মধ্যেই দুই ভাগ আছে। কেউ কেউ লিটন আর শান্তকে দিয়েই আজকের ম্যাচে ওপেন করানোর পক্ষে, বিপক্ষের যুক্তি নতুন বলে ওরা চাপ সামলাতে পারছেন না, সেই কারণে সৌম্য- ইমরুলকে রাখা হোক। মোসাদ্দেকের জায়গায় আরিফুলকে খেলানোর চিন্তাও করা হচ্ছে। যাদের বাইরে রাখার কথা উঠছে তারা প্রত্যেকেই প্রচণ্ড চাপের কাছে পরাস্ত হয়েছেন বলে টিম মিটিংয়ে প্রমাণিত হয়েছে।

তবে অতীত বলে প্রচণ্ড চাপের মধ্যেই বিস্ম্ফোরিত হয়েছে টাইগাররা। ভেতরের জিদটা আগুন হয়ে বেরিয়ে এসে প্রতিপক্ষকে ছারখার করে দিয়েছে। দুবাই থেকে দিনাজপুর, আবুধাবি থেকে আশুগঞ্জ আজ টাইগারদের মধ্যে সেই ক্ষুধার্ত ভাবটাই দেখতে চাইছে।

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --