August 5, 2019
প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে ডেঙ্গুর
আলোর পরশ নিউজ প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গতকাল রোববার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮৭০ জন। গত জুন মাসের ৩০ দিনে আক্রান্তের চেয়ে গতকাল তার চেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুর শিকার হয়েছে। জুন মাসে মোট আক্রান্ত ছিল ১৮৬৩ জন। অপর দিকে চলতি আগস্টের গত চার দিনে আক্রান্ত হয়েছে ছয় হাজার ৯৬৭ জন। এই সংখ্যাটি বিগত বছরের মোট আক্রান্ত থেকে মাত্র ৯৫৪ কম। গত জুলাই মাসের ৩১ দিনে আক্রান্ত হয় ১৫ হাজার ৬৫০ জন। সারা দেশে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে চিকিৎসাধীন আছে ৭৩৯৮ জন। অন্যান্য বছরে ডেঙ্গু কেবল রাজধানী অথবা অন্য বড় শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এ বছর দেশের সর্বত্রই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এ দিকে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন আরো চারজন। এদের মধ্যে গতকাল ঢাকায় অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন কোরেশীর স্ত্রী সৈয়দা আক্তার এবং ইডেন কলেজের ছাত্রী শান্তা আক্তার মারা গেছেন। এ ছাড়া খুলনায় স্কুলছাত্র ও বৃদ্ধা এবং নোয়াখালীর সেনবাগে প্রবাসী মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম যখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয় তখন আক্রান্ত হয়েছিল পাঁচ হাজার ৫৫১ জন। ২০০২ সালে ছয় হাজার ২৩২ জন, ২০০৪ সালে তিন হাজার ৯৩৪ জন, ২০০৬ সালে দুই হাজার ২০০ জন, ২০১৫ সালে তিন হাজার ১৬২ জন, ২০১৬ সালে ছয় হাজার ৬০ জন, ২০১৭ সালে দুই হাজার ৭৬৯ জন এবং ২০১৮ সালে ছিল সাত হাজার ৯২১ জন। অতিরিক্ত আইজিপির স্ত্রীর মৃত্যু : ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজি (ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) শাহাবুদ্দিন কোরেশীর স্ত্রী সৈয়দা আক্তার (৫৫) মারা গেছেন। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো: সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সৈয়দা আক্তার গত শনিবার অসুস্থ হয়ে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। এর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিনি রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সৈয়দা আক্তারের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। তিন ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জননী ছিলেন তিনি। ঢাকায় পরিবারের সাথে রাজারবাগের পুলিশ অফিসার্স বাসভবন মেঘনায় বসবাস করতেন তিনি। শেবাচিমে ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ রোগী মারা যাওয়া মঞ্জুর রূপসা উপজেলার কাজদিয়া সরকারি কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। সে উপজেলার টিএসবি ইউনিয়নের উত্তর খাজাডাঙ্গা গ্রামের সবজি বিক্রেতা বাবুল শেখ ওরফে বাবুর ছেলে। মঞ্জুর দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড়। জানা গেছে, মঞ্জুর শেখ কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছিল। সাধারণ জ্বর ভেবে পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। কিন্তু কোনো উন্নতি না হওয়ায় শনিবার তাকে খুমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নিতে বলেন। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় পরবর্তীতে খুলনা সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখান থেকে ফেরত দেয়া হয়। পরে নেয়া হয় গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোবিবার সকালে সে মারা যায়। অপর দিকে মর্জিনা বেগম দিঘলিয়া উপজেলার ব্রক্ষ্মগাতী গ্রামের ইসরাইল সরদারের স্ত্রী। তার স্বজনরা জানান, ডেঙ্গু ছাড়াও মর্জিনা বেগম লিভার রোগে আক্রান্ত ছিলেন। লিভারের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তিনি। নওগাঁ হাসপাতালে ২০জন : নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, জেলায় গতকাল রোববার আরো ৪ ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গত ৯ দিনে ৪২জন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হলো। বর্তমানে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ২০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত নওগাঁ থেকে ১৬জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। আক্রান্ত ৪২ রোগীর মধ্যে ৩জন নওগাঁতেই আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান নওগাঁ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: রওশন আরা খানম। ডেঙ্গু পরীক্ষার অজস্্র সুপারিশ : ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, সাধারণ জ্বরে আক্রান্তদের মাঝে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিস্তারের প্রভাব পড়েছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগে। বিভিন্ন মহল থেকে জ্বরে আক্রান্ত হলেই হাসপাতালে ডেঙ্গু জীবাণু শনাক্তরণের জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। এর ফলে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটের সঙ্কট পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিভিল সার্জন এনামুল হক জানিয়েছেন, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে আপাতত ডেঙ্গু শনাক্ত করার কিটের সমস্যা নেই। তবে বিভিন্ন সুপারিশের কারণে এর অপব্যবহার হচ্ছে। তিনি বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শের বাইরে গত শনিবার রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলের সুপারিশে মোট ৪২জনের রক্ত পরীক্ষা করে মাত্র একজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা গেছে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা যাতে করতে না হয় সে ব্যাপারে তিনি সকল মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন। এ দিকে ফরিদপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ২৬জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৬জন ও ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে দুইজন। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা জানান, গত ২০ জুলাই থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ভর্তি হয়েছেন ১৬০জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ১০৯জন। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ২৩জন নিজ বাড়িতে থেকে আক্রান্ত হয়েছেন। বি’বাড়িয়ায় পরীক্ষার উপকরণ নেই রামেকে বাড়ছে রোগী |
|
সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত |
e-mail: alorparosh@gmail.com- -- |