December 17, 2018
পুলিশের ভয়ে ইসলামী বইয়ের ক্রেতা কমেছে!

আলোরপরশ নিউজঃ ভাই এখন আর বাসায় ইসলামী বই রাখা যায় না, ঘরে যুবক ছেলে আছে, পুলিশ কখন আবার বাড়িতে গিয়ে অভিযান চালায় তার ঠিক নেই, আর কুরআন-হাদিসসহ কোনো ইসলামী বই পেলেই বলবে জিহাদি বই পাওয়া গেছে, ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়ে বলবে জঙ্গি পাওয়া গেছে, এই ভয়ে এখন আর ইসলামী বই কেনা যায় না।’ অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই এ মন্তব্য করেন মাহবুবুর রহমান নামে অবসরপ্রাপ্ত এক কলেজশিক্ষক।

গতকাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ চত্বরে আয়োজিত ইসলামী বইমেলায় কথা হয় তার সাথে। মাহবুবুর রহমান বলেন, ইসলামী বই পড়লে তরুণেরা আরো ভদ্র-সভ্য হয়। তারা নারীদের ইভটিজিং করে না। মাদক গ্রহণ করে না। বাবা-মাকে সম্মান করে। ঘরে শান্তিতে থাকা যায়। অনেক পরিবারে দেখেছি তাদের তরুণ ছেলেমেয়ে আছে, কিন্তু ছোটবেলায় কুরআন-হাদিস শিক্ষা দেয়নি। পরে ওই পরিবার বিপদে পড়েছে। ছেলেমেয়ে মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। টাকার জন্য বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায়। মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। এমন অনেক বাবা-মাকে চোখের পানি ফেলতে আর আফসোস করতে দেখেছি।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা: ১৪৪০ হিজরি উদ্যাপন উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ চত্বরে গত ২০ নভেম্বর থেকে চলছে ইসলামী বইমেলা। ধর্মসচিব মো: আনিছুর রহমান মেলার উদ্বোধন করেন। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। এবারের মেলায় ৬০টি স্টল অংশগ্রহণ করেছে। মাসব্যাপী এ মেলা শেষ হবে আগামী ১৯ ডিসেম্বর। মেলা ঘুরে দেখা যায়, কুরআন-হাদিস গ্রন্থের পাশাপাশি বিভিন্ন ইসলামী শিক্ষামূলক বই, নবী-রাসূলদের জীবনী, ইসলামী ব্যক্তিত্বদের জীবনীসহ বিভিন্ন ধরনের বই বিক্রি চলছে। এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে বিশ্বনবীর জীবনী, তাজকেরাতুল আউলিয়া, নূরানি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ২৪ ঘণ্টায় কুরআন শিক্ষা, রাসূল সা:-এর ২৪ ঘণ্টার আমল, ইমাম গাজ্জালির জীবন, গিবত ও চোগলখোরির ধ্বংসলীলা, মরণের আগে ও পরে, ইসলামে হালাল ও হারাম প্রভৃতি।

তবে বইমেলায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানকে নিয়ে লেখা ‘এরদোগান দ্য চেঞ্জ মেকার’, অটোম্যান সামাজ্র নিয়ে লেখা ‘সানজাক-ই-উসমান’, ড. হিশাম আল আওলাদির লেখা ও মাসুদ শরীফের অনুবাদ করা ‘বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মদ সা:, ইসলামের চোখে পৃথিবীর ইতিহাস ‘ডেসটিনি ডিজারাপ্টেড’, মিসরের বিখ্যাত লেখক ড. আয়াজ আল কারনির লেখা ‘লা তাহযান’ বইয়ের বাংলা অনুবাদ ‘হতাশ হবেন না’ বইগুলোর বিক্রি বেশি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। বই ছাড়াও মেলার বিভিন্ন স্টলে টুপি, জায়নামাজ, আতর, মেসওয়াক ও তসবি বিক্রি করা হচ্ছে।

গত কয়েক দিন মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা উপস্থিতি খুবই কম। জোহর, আসর ও মাগরিব নামাজের পর কিছু লোক মেলায় আসেন। তাদের কেউ কেউ বই কেনেন। এ ছাড়া দূর থেকে বই কেনার উদ্দেশ্যে খুব কম লোকই আসেন। মেলায় ক্রেতা উপস্থিতি কম হওয়ার জন্য বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশ ও প্রচারের অভাবকে দায়ী করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। সিদ্দিকিয়া পাবলিকেশন্স স্টলের বিক্রেতা আব্দুল মজিদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ২১ শে বইমেলা নিয়ে যেভাবে প্রচার হয়, ইসলামী বইমেলা নিয়ে তেমন কখনোই করা হয় না। এ জন্য ক্রেতা কম হয়। এ ছাড়া মানুষের ইসলামী বইয়ের প্রতি আগ্রহও কমে গেছে। নামাজের পর কিছু ক্রেতা আসেন। এ ছাড়া শুক্রবার জুমার নামাজের পর কিছু বই বিক্রি হয়।

এমদাদিয়া লাইব্রেরির স্টলের একজন বিক্রেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, মানুষ এখন ইসলামী বই কিনতে ভয় পায়। ঘরে ইসলামী বই রাখলে যদি কোনো বিপদ হয় এই আশঙ্কায়। তারপরও কিছু লোক কেনে।

মেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৩০ শতাংশ ছাড়ে বই দিচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ হাজার টাকার থেকে বেশি বই কিনলে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। তবে এ স্টলেও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না বলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান। এ ছাড়া অন্য স্টলগুলোতে ২৫ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ও মেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. হারুনুর রশীদ নয়া দিগন্তকে বলেন, মেলা নিয়ে প্রতিদিন বায়তুল মোকাররমে নামাজের পর এবং আলোচনা সভাগুলোতে মুসল্লিদের বলা হয়। তবে নির্বাচনের কারণে রাজধানীর অনেক মানুষ এখন গ্রামে চলে গেছেন। তারপরও মেলায় বিক্রি খারাপ হচ্ছে বলা যাবে না।

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --