November 26, 2018
দাঁতের যত্নে ভেষজ

আলোরপরশ নিউজঃ  দাঁত মানবদেহের সবচেয়ে শক্ত অংশ। প্রাপ্ত বয়সে মুখগহ্বরের ওপরে ও নিচের চোয়ালে সাধারণত ১৬টি করে মোট ৩২টি দাঁত থাকে। স্থায়ী দাঁত চার ধরনের। যথা- ১. কর্তন দাঁত : এই দাঁত দিয়ে খাবার কেটে টুকরা করা হয়। ২. ছেদন দাঁত : এই দাঁত দিয়ে খাবার ছেঁড়া হয়। ৩. অগ্রপেষণ দাঁত : এই দাঁত দিয়ে চর্বণ, পেষণ উভয় কাজ করা হয় এবং ৪. পেষণ দাঁত : এই দাঁত খাদ্যবস্তু চর্বণ ও পেষণে ব্যবহৃত হয়।

দাঁতের গঠনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করলে দাঁতের সবচেয়ে বাইরের শক্ত আবরণ হিসেবে পাওয়া যায় এনামেল, যা ক্যালসিয়াম ও ফসফেট দ্বারা গঠিত। দাঁতের ভেতরের স্তর ডেন্টিন, যা দাঁতের বেশির ভাগ স্থানজুড়েই বিদ্যমান। দন্তমজ্জা (ডেন্টাল পাল্প) দাঁতের ভেতরের অংশ, যেখানে স্নায়ু ও রক্তবাহী নালিকা বিদ্যমান থাকে। আর সিমেন্ট দাঁতের মূলের চার দিকে অবস্থিত পাতলা স্তর। এটি এক ধরনের অস্থিসদৃশ আবরণ, যা দাঁতকে চোয়ালের সাথে সংযুক্ত রাখে। দাঁতের সিমেন্ট ও চোয়ালের মাঝখানে যে সূক্ষ্ম ফাঁকা স্থান থাকে, সেখানে অগণিত অতি সূক্ষ্ম তন্তুসদৃশ লিগামেন্ট থাকে, যাকে পেরিওডন্টাল টিস্যু বলে। দাঁতকে হাড়ের সাথে সংযুক্ত রাখাই এ ধরনের টিস্যুর প্রধান কাজ।

দাঁতের গঠন উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেকেরই গরম, ঠাণ্ডা, টক বা মিষ্টি খাবার খেলে দাঁতে অস্বস্তিকর অনুভূতি সৃষ্টি হয়। তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় দাঁতের স্নায়ুতে। দাঁতের এই স্পর্শকাতরতার পেছনে দায়ী থাকতে পারে দাঁতে এনামেলের অভাব, ক্যালসিয়ামের অভাব অথবা দাঁতের ডেনটিন লেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। দন্তরক্ষায় বেশ কিছু প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদান রয়েছে, যা দাঁতের সমস্যাগুলো সারিয়ে তুলতে পারে আনায়াসেই। বিভিন্ন ন্যাশনাল ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এসব গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উপাদান দিয়ে টুথপেস্ট ও মাউথ ওয়াশ এবং টুথপাউডার তৈরি করে বাজারজাত করেছে। এসব উপাদান সরাসরি ব্যবহার করেও অনেক উপকার পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-

দারুচিনি ও লবঙ্গের : দারুচিনির বিভিন্ন উপকারী উপাদান মুখের ভেতর থাকা রোগজীবাণু দূর করে। লবঙ্গ দাঁত ও মুখের জন্য বেশ উপকারী। নিয়মিত দু-একটি লবঙ্গ মুখে দিলে তা মুখের সুগন্ধি বজায় রাখে। লবঙ্গতে আছে ইউজেনল নামক এক ধরনের উদ্বায়ী তেল, যার ব্যথানাশক ও জীবাণু প্রতিরোধক গুণাগুণ গবেষণাগারেও প্রমাণিত। ধূমপায়ী ব্যক্তির মুখের পরিচর্যায় এটি বেশ কার্যকর। দারুচিনির সাথে লবঙ্গের ব্যবহারে স্পর্শকাতর দাঁতের জন্য সবচেয়ে ভালো প্রতিকার হিসেবে ফল পাওয়া যায়। দারুচিনি ও লবঙ্গ পানিতে ফুটিয়ে সেই পানি দিয়ে দিনে দু’বার কুলি করলে দ্রুত দাঁতের ব্যথা দূর করে এবং দন্তক্ষয় প্রতিরোধ করে থাকে।

নিম : প্রাচীনকাল থেকেই দাঁতের পরিচর্যায় নিমগাছের মাজন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিমের মধ্যে তিক্ত স্বাদের স্যাপোনিন, ফ্লাভোনয়েড, ট্যানিন, অ্যালকালয়েড, গ্রাইকোইকোসাইড ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান। এসব উপাদান জীবাণুর বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি দন্তক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা কমায়। অন্য দিকে এখনো গ্রামগঞ্জে হলুদ গুঁড়ার সাথে লবণ ও সরিষার তেলের মিশ্রণ দিয়ে প্রতিদিন দাঁত পরিষ্কার করতে দেখা যায়। এটি করলে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, ব্যথা, প্রদাহ, জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত হয়। তা ছাড়া পুদিনা, তুলসী, বাবলাপাতারও রয়েছে দাঁতের ওপর কার্যকর প্রভাব।

দন্তরক্ষার জন্য ভেষজ উপাদান ব্যবহারের পাশাপাশি মৌলিক বিষয়গুলোও পালন করা দরকার- সচেতনভাবে দাঁত ব্রাশ করার পাশাপাশি নিয়মিত দন্ত চিকিৎসকের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করলে দাঁতের ক্যালকুলাস বা টারটার এবং দাঁতে অবস্থানরত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর হয়। দাঁত পরিষ্কারের জন্য টুথ স্কেলিং করা নিরাপদ। যাতে করে দাঁতের ফাঁকা জায়গায় অবস্থানরত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে দূরে রাখা সম্ভব হয়। দাঁত পরিষ্কার রাখার উদ্দেশ্যই হচ্ছে দাঁতের আবরণে ও ফাঁকা জায়গায় অবস্থানরত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূরে রাখা। তাই প্রতিদিন খাদ্য গ্রহণের পর সকালে কিংবা রাতে দু’বার নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করতে হয়।

প্রতি তিন মাস অন্তর টুথব্রাশ পরিবর্তন করা, সম্ভব হলে এর আগেই টুথব্রাশ পরিবর্তন করা যেতে পারে। প্রতি ছয় মাস পরপর দন্তচিকিৎসকের সুপারিশ গ্রহণ করা ভালো। তবে প্রাকৃতিক উপাদানযুক্ত উপকরণের পাশাপাশি ফ্লুরাইডযুক্ত টুথপেস্ট বা মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত, যা দাঁতকে আরো সুরক্ষা করতে সাহায্য করবে।

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --