November 7, 2018
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশতাধিক

আলোরপরশ নিউজঃ

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ঠিক কতজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার সঠিক কোনো হিসাব সরকারের কাছে নেই। তবে মৃতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়ে গেছে- এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

তারা জানান, রাজধানীর বিলাসবহুল হাসপাতালগুলোতে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুরোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। সেখানে অনেকের মৃত্যু হয়েছে, যে তথ্য গোপন করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর বাইরেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কয়েকজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও যুগান্তরের হাতে সরকারি তথ্যের বাইরে বেশকিছু তথ্য রয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, পুরান ঢাকার একটি বিলাসবহুল হাসপাতালে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখ পর্যন্ত ১২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যাদের বয়স ৩ মাস থেকে ২ বছর। এছাড়া কয়েকজন বয়স্ক রোগীরও মৃত্যু ঘটে ওই হাসপাতালে। নিয়মিতভাবে ওই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ঘটায় তারা এ রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একাধিক চিকিৎসক যুগান্তরকে জানান, এ চিত্র শুধু পুরান ঢাকার ওই হাসপাতালের নয়। রাজধানীর পশ্চিম পান্থপথের একটি ও গ্রীন রোডের তিনটি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অনেক রোগীর মৃত্যু ঘটেছে।

এছাড়া ধানমণ্ডি, গুলশান, মালিবাগ, মিরপুর এবং খিলগাঁওয়ের কয়েকটি হাসপাতালের চিত্র অনেকটা কাছাকাছি। এসব হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এসব হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হেমোরেজিক বা শক সিন্ড্রোমের রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা যুগান্তরকে বলেন, অর্ধশত রোগীর মৃত্যু হয়েছে- এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই। এ বছর ডেঙ্গুর চারটি সেরোটাইপের মধ্যে ডেন- ৩তে আক্রান্ত হচ্ছে বেশির ভাগ মানুষ।

এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ। তাছাড়া পরীক্ষা করে দেখা গেছে ডেঙ্গু নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তারা বেশির ভাগই দ্বিতীয়বারের মতো আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, এ বছর এখনও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। বৃষ্টি না কমায় এমনটি হচ্ছে। তবে রোগীর মৃত্যুর সঠিক হিসাব অধিদফতরে নেই। কারণ সবগুলো বেসরকারি হাসপাতাল অধিদফতরে তথ্য দেয় না।

রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. একেএম মোজাহের হোসেন যুগান্তরকে জানান, গত জুন থেকে এ পর্যন্ত সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ১০৪৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৩ জনের মৃত্যু ঘটেছে। তিনি জানান, আশপাশের অনেক হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি না করায় এ এলাকায় তাদের হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. শাখাওয়াত হোসেন জানান, সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ রোগের মারা গেছে ২৪ জন। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীতে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮ হাজার ৮০৩ জন।

সেই হিসাবে এ বছর প্রতি মাসে রাজধানীতে গড়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮০০ জন। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতলে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৬২ জন। ১৫ বছরের মধ্যে ডেঙ্গুতে এবারই সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের যে সংখ্যা কন্ট্রোল রুম থেকে প্রকাশ করা হয়, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা তার চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার তথ্য যুগান্তরের কাছে রয়েছে।

মন্ত্রণালয় বা অধিদফতরের বাধ্যবাধকতা না থাকায় জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে এ সংক্রান্ত কোনো পরিসংখ্যান রাখা হয় না। এমনকি এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমেও প্রেরণ করা হয় না।

সরকারের রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের একজন ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশেষজ্ঞ যুগান্তরকে বলেন, এডিস মশা ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস ছড়ায়। ডেঙ্গুতে চার ধরনের ভাইরাস (সেরোটাইপ) রয়েছে। ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪। এই চার ধরনের ভাইরাসই বাংলাদেশে আছে। ২০০০ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গুতে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়াটা যে কোনো রোগীর জন্য ভয়াবহ। কেন না, প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয়বারের ভয়াবহতা প্রায় ২০০ গুণ বেশি। আক্রান্তের অল্প সময়ের মধ্যে রক্তক্ষরণ দেখা দিতে পারে। অনেক রোগীর পেটে বা বুকে পানি জমে। এছাড়া দ্বিতীয়বার আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃত্যুর হারও বেশি। তারা জানান, একবার যে দেশে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটে সে দেশ থেকে তা চিরতরে বিদায় হয় না।

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --