September 26, 2018
ছাত্রলীগের সভাপতির প্রশ্রয়ে বেপরোয়া আমির হামজা
আলোপরশ নিউজ; এবার শীর্ষ তিন নেতার দেয়া সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করেই অপরাধীদের পক্ষ নেয়ার অভিযোগ ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় সভাপতির এরকম পক্ষপাতিত্বের ফলে দোকান কর্মচারীর মাথা ফাটিয়েও দাপটের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা। এর আগে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ হামজাকে সংগঠন থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। অবশ্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জানান, তারা বহিষ্কার চান, কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আমির হামজাকে বহিষ্কারের সুপারিশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী জানান, আমরাতো চাই তাকে বহিষ্কার করতে। কিন্তু আপনি সভাপতির সাথে কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস বলেন, আমরা তাকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করেছি। আপনি কেন্দ্রীয় সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ কখনোই অপরাধীকে প্রশ্রয় দেয়না। আমরা অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করেছি। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, অভিযুক্ত আমির হামজা কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের অনুসারী। ফলে শোভনের আপত্তি থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশের পরও আমির হামজার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এ বিষয়ে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে অসংখ্যবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এর আগে রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল এলাকায় সেবা ফার্মসী দোকানে হামলা চালিয়ে শুভ নামের এক কর্মচারীর মাথা ফাটিয়ে দেন আমির হামজা ও সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল শাখা ছাত্রলীগের স্কুল-ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হাসান ঝন্টু। গুরুতর আহত অবস্থায় শুভকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেকে) ভর্তি করা হয়। তার মাথায় আটটি সেলাই দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এই ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। তারা গিয়ে ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের অনুসারী আমির হামজার বিরুদ্ধে সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা আন্দোলনের নেতা নুরুলহক নুরকে চাপাতি দিয়ে কোপাতে গিয়েছিলেন তিনি। রাজধানীর বাটা সিগন্যালের সামনে কোটা আন্দোলনের তিন নেতাকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া সাত কলেজের অধিভূক্তি বাতিল চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। তবে সবগুলো অভিযোগই অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা আমির হামজা। এদিকে ঢাবি ছাত্রলীগ তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কারের সুপারিশ করলেও কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাবি ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, অপরাধীদের ছাত্রলীগে স্থান না দিতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সুপারিশ করেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি এই অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। তাদেরকে যত দ্রুতই বহিষ্কার করা হবে, ততই ভাল। এদিকে এর আগেও অপরাধীকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা দেখা গেছে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের কার্যক্রমে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে এক সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত সাবেক ও বর্তমান দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি তা বাস্তবায়ন করেন নি। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এই অপরাধীদের একজনকে সফরসঙ্গী করেছিলেন তিনি। অপর একজন মদের বারে সংঘর্ষের ঘটনায় বহিষ্কৃত হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধেও তিনি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি। |
|
সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত |
e-mail: alorparosh@gmail.com- -- |