November 11, 2019
প্রশাসনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রান কার্যক্রম শুরু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে সাতক্ষীরার ৪৭ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ও ২৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্থ

 

আলোরপরশ নিউজ: ।।ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে সাতক্ষীরার ৪৭ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ৫ হাজার ১৭টি মৎস্য ঘের। আংশিক ও সম্পূর্ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ও দুই হাজার হেক্টর জমির সবজি, পান, সরিষা ও কুলসহ অন্যান্য ফসল। ভেঙ্গে পড়েছে অসংখ্যা গাছ পালা। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১২ কিলোমিটার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। গত তিনদিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে উপকূলীয় শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলা।
রবিবার ভোর রাত ৩টার দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল সাতক্ষীরার উপকূলে আঘাত হানে। এসময় বৃষ্টিসহ বাতাসের গতিবেগ ছিল প্রায় ৮০ কিলোমিটার। প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা ধরে বুলবুল সাতক্ষীরা উপকূলে তান্ডব চালায়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে সাতক্ষীরার ৪৭ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্থ হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৩০ হাজার ঘরবাড়ি। এছাড়াও ৫ হাজার ১৭টি মৎস্য ঘের এবং ১৫ হাজার হেক্টর জমির আমন সম্পূর্ণ ও ১০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই হাজার হেক্টর জমির সবজি, পান, সরিষা ও কুলসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঝুড়ে উপড়ে ও ভেঙ্গে পড়েছে অসংখ্যা গাছগাছালি। রাস্তায় গাছ পড়ে অনেক স্থানে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঘূর্ণিঝড়ের পর সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজের পাশাপাশি দ্রুত সড়কের গাছ সরিয়ে সড়ক যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু করে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত আনার আগেরদিন শনিবার বিকাল থেকে সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দুইদিন ধরে ওই এলাকায় গ্রামীন ফোনের মোবাইল সংযোগ ছিলা না। বিদ্যুৎ না থাকায় চরম র্দূভোগের মধ্যে রয়েছে ওই চার ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার্থীরা। তবে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সময় নদীতে ভাটা থাকায় উপকূলীয় এলাকায় কোন বেড়িবাঁধ ভাঙ্গেনি। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম সর্তকতা অবলম্বন করায় এবং সময়মত উপকূলীবাসীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ায় কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। শনিবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা উপকূলের এক লাখ ২ হাজার মানুষকে নিরাপদে আশ্রয়ে নেওয়া হয়। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, নৌ বাহিনী ও কোস্ট গার্ডের সাথে সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হয়।
জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, সাতক্ষীরার উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালীনি, মুন্সিগঞ্জ, রমজাননগর ও কাশিমাড়িসহ আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা ও শ্রীউলা এলাকাসহ অন্যান্য উপজেলার অধিকাংশ কাচা ঘর নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব এলাকার মৎস্য ঘের ও ফসলের ক্ষেত। উপড়ে পড়েছে হাজার হাজার গাছগাছালি। এতে রাস্তায় গাছ পড়ে অনেক এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার ছিড়ে ও খুটি উপড়ে পড়ে বিদ্যুতহীন হয়ে পড়েছে এলাকাগুলো।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে উপকূলীয় শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও আশাশুনি এবং তালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫ হাজার ১৭টি মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ৫ হাজার ১৯ হেক্টর জমির ৪১৫ মেট্রিক টন সাদা মাছ ভেসে গেছে। জেলা মৎস্য সেক্টরে ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
জেলা কৃষি কর্মকর্তা অরবিন্দু বিশ্বাস জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে জেলার ১৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন সম্পূর্ণ ও ১০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধান আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ৮৪০ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ ও ৩৬০ হাজার হেক্টর জমির সবজি আংশিক, ৫০০ হেক্টর জমির সরিষা সম্পূর্ণ, ৬০ হেক্টর জমির পান সম্পূর্ণ ও ৬০ হাজার হেক্টর জমির পান আংশিক এবং ১০০ হাজার হেক্টর জমির কুল সম্পূর্ণ ও ১০০ হেক্টর জমির কুল আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাতক্ষীরা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ সুন্দরবন উপকূলীয় বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের কয়েক শ’ পরিবারের মাঝে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। রবিবার বিকালে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউপি পরিষদ চত্ত্বরে এ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ৯ ইস্ট বেঙ্গল ৫৫ যশোর পদাতিক ডিভিশনের ক্যাপ্টেন এফএস জিসান।
এদিকে গতকাল সোমবার গাবুরা ইউনিয়নের এক হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল। এদিকে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকারিদের অনেকেইে গতকাল সোমবার থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল বলেন, রোববার ভোরে ঘূণিঝড় বুলবুল সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে। এর তীব্রতা ছিলো ভয়াবহ। আমাদের টার্গেট ছিলো কোন মানুষ যেন অনিরাপদ না থাকে। আমরা সেটা করতে পেরেছি। মালের ক্ষতি হলেও মানুষের জানের কোন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু উপকূলীয় এলাকায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। গাবুরা ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে সাতক্ষীরার ৪৭ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এছাড়াও ৫ হাজার ১৭টি মাছের ঘের ও ২৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ১২ কিলোমিটার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে। গাবুরা এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ সহ্রাধিক পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এটা কাটিয়ে উঠতে ইতোমধ্যে তালিকা প্রনোয়ন শুরু করা হয়েছে। খুব দ্রুত এটা সরকারে কাছে প্রেরণ করা হবে। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্থরা কেউ ত্রাণের আওতার বাইরে না যায় সেজন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ বিতরণে কোন রকম দূনীতি হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --