July 16, 2019
শতাব্দীর সবচেয়ে বড় বন্যার আশঙ্কা

* বন্যায় এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে  
* দুর্গত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে রোগ-ব্যাধি 
* বিশুদ্ধ পানি এবং খাদ্যের জন্য হাহাকার
ইবরাহীম খলিল : ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ও নেপালে বৃষ্টিপাত বাড়ায় দেশের ১৬ জেলায় ১৮টি নদ-নদীর পানি ২৫টি পয়েন্ট বিপদসীমার ওপরে অবস্থান করছে। যা আগামী তিন দিনের মধ্যে না কমলে দেশে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অন্যদিকে, পার্বত্য অঞ্চলগুলোতেও টানাবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পানি বেড়েই চলেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য বলছে, আগামী ৩০ থেকে ৪০ ঘণ্টার মধ্যে দেশের ২০ থেকে ২২টি জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বুধবারের মধ্যে এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি হতে পারে। তবে বৃষ্টি বা উজানের ঢল বন্ধ হলে কিছু দিন স্থির থেকে পানি স্বাভাবিকভাবে কমতে থাকবে। তবে এর উল্টোটা হলে এই শতকের সবচেয়ে বড় বন্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড মাঝারি মানের বন্যার সম্ভাবনা দেখছে।
অব্যাহত বৃষ্টি আর উজানের পানিতে নদী তীরবর্তী বেশিরভাগ জনপদ তলিয়ে গিয়ে বড় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা কবলিত এসব এলাকায় জনবসতি তলিয়ে গিয়ে খাবার পানির সংকট সহ তীব্র মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানাচ্ছে, সুরমা নদী সিলেটের কানাইঘাটে বিপদসীমার ১১০ সেন্টিমিটার, সিলেটে ৬১ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জে ৭৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই বিভাগের অন্যান্য নদীর মধ্যে কুশিয়ারা নদী অমলশীটে ১৪৬ সেন্টিমিটার, শ্যাওলায় ৯৫ সেন্টিমিটার, সিলেটের শেরপুরে ৫১ সেন্টিমিটার, মনু নদী রেলওয়ে ব্রীজে ৪৮ সেন্টিমিটার, মৌলভীবাজারে ৮৪ সেন্টিমিটার, ধলাই নদী কমলগঞ্জে ১৯ সেন্টিমিটার, খোয়াই নদী বাল্লায় ১০৩ সেন্টিমিটার, হবিগঞ্জে ১০ সেন্টিমিটার, পুরাতন সুরমা ধিরাইয়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সারাদেশে বিপদসীমায় ছাড়িয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে সোমেশ্বরী নদী কমলাকান্দায় ৬৫ সেন্টিমিটার, কংস নদী ৪৩ সেন্টিমিটার, ধরলা নদী কুড়িগ্রামে ১০৮ সেন্টিমিটার, তিস্তা নদী কাউনিয়ায় ১৬ সেন্টিমিটার, ঘাঘট নদী গাইবান্দায় ৬৮ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদী নুনখাওয়ায় ৭১ সেন্টিমিটার, চিলমারীতে ১০২ সেন্টিমিটার, যমুনা নদী ফুলছড়িতে ১০৬ সেন্টিমিটার, বাহাদুরাবাদে ১১৯ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে ৭৯ সেন্টিমিটার, কাজিপুরে ৪৫ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে ১৬ সেন্টিমিটার, সাঙ্গু নদী বান্দরবনে ৪০ সেন্টিমিটার, দোহাজারীতে ১০০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এগুলো ছাড়া অন্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে বইছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও দেশের সকল নদনদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৭২ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, গঙ্গা ও পদ্মা নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এরমধ্যে ধলেশ্বরী নদী এলাশিং পয়েন্টে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। নদ-নদীগুলোর ৯৩টি পয়েন্টের মধ্যে ২৫টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এসব নদীর পানি দিনে তিন থেকে চার ইঞ্চি করে বাড়ছে।
এখনো পর্যন্ত দেশের ১৬টি জেলায় বন্যার পানি ঢুকেছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বন্যায় ডুবে যাওয়া জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মঞ্জুর হাসান। অপরদিকে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম, বান্দরবন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে।
এদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় কয়েক লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও খাদ্যসংকটে রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষকে কলাগাছের ভেলা ও ছোট নৌকায় চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে এসব এলাকায় খাদ্যসংকট আরও তীব্র হচ্ছে। বন্যা কবলিত জেলাগুলোতে ঘরবাড়ী ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। খামারিরা বিপাকে পড়েছেন তাদের পোষা গবাদি পশু হাঁস-মুরগির নিয়ে। পুকুর ও জলাশয়গুলো ডুবে যাওয়ায় মৎস্যচাষীরা বড় অংকের লোকসানের মুখে পড়েছেন।
এদিকে দেশের বন্যা আক্রান্ত ১৬ জেলায় ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ (আরটিআই), চোখের প্রদাহ ও চর্মরোগসহ নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। গত বুধবার থেকে সোমবার পর্যন্ত এসব এলাকায় পানিতে ডুবে, বজ্রপাতে ও ও সাপের কামড়ে গতকাল সোমবার পর্যন্ত মোট ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পানিতে ডুবে ৭ জন, বজ্রপাতে ৩ জন ও সাপের কামড়ে ২ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে মোট এক হাজার ২২৫ জন আক্রান্ত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন রোগে ৬৭২ জন আক্রান্ত ও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরে হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, বগুড়া, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও জামালপুরে বন্যা দেখা দিয়েছে। গত ১০ জুলাই থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতর এই ১৬ জেলার রোগব্যাধি সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। তিনি আরও জানান, এই ১৬ জেলার ৫৩টি উপজেলার ২০৯টি ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত। এসব এলাকায় মোট আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা এক হাজার ২৬৯টি। বর্তমানে ১৬ জেলায় এক হাজার ৫৪৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।
গত ছয় দিনে আক্রান্ত জেলাগুলোতে ৪২৮ জন ডায়রিয়া, ১৮৯ জন আরটিআই, ৭ জন বজ্রপাতে, ১০ জন সাপের কামড়ে, ৪ জন পানিতে পড়ে ১১৪ জন চর্মরোগে, ৪৯ জন চোখের প্রদাহ, ১৫ জন আঘাতপ্রাপ্ত ও অন্যান্য রোগে ৪১২ জন আক্রান্ত হন। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
পানিতে ডুবে মৃতরা হলেন- রংপুরের পীরগঞ্জের হাজীপুর গ্রামের শাহিনুর আলমের ৭ বছরের ছেলে মুহিত আলম, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ থানার চাঁপাতলা গ্রামের সেকেন্দার আলী ছেলে সুজন (১৩), নেত্রকোনার মদন থানার নুরপুর গ্রামের মোখলেসুর রহমানের ৬ বছরের মেয়ে সুইটি আক্তার, একই গ্রামের মুজিবুর রহমানের ৬ বছরের শিশুকন্যা রাফিয়া আক্তার, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানা চাঁদপুর গ্রামের বেলাল হোসেনের ৮ বছরের শিশুপুত্র ইমাম হোসেন ও কক্সবাজারের চকরিয়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন (১৯)।
সাপে কেটে মৃতরা হলেন- লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানার জগৎপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ১৫ বছরের ছেলে হাফিজুল হক ও নীলফামারীর ডিমলা থানার বাইশপুকুর গ্রামের আমিনুর রহমানের স্ত্রী মোরশেদা (৩২)।বজ্রপাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন- নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানার বড়ুয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে এনামুল (১৮), সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের মানিকশিলা গ্রামের মোহাম্মদ মিরাজ আলীর ছেলে হরিদুল (৫০) ও হরিদুলের ছেলে তারা মিয়া (১২)।
কুড়িগ্রাম: পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পাশাপাশি নদী ভাঙনে মানুষ ভিটেমাটি হারানোসহ ভাঙছে বিভিন্ন স্থাপনা। জেলার নয়টি উপজেলার চরাঞ্চলের তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।  সোমবার দুপুর পর্যন্ত কুড়িগ্রামের ২৮৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে, মাঠে ও চলাচলের রাস্তায় পানি ওঠায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। স্কুলগুলোর অনেকগুলোর মাঠ চার-পাঁচ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। বন্যার পানির তীব্র স্রোতের মুখে ভেঙে গেছে জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার শংকর মাধবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নাগেশ্বরী এলাহীর চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে শিক্ষকদের উপস্থিত থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণকে বন্যা মোকাবিলায় সহায়তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যার পাশাপাশি নদী ভাঙনে এ পর্যন্ত গৃহহীন হয়েছে এক হাজার ৩১টি পরিবার।  জেলা সদরের হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব, বাংটুর ঘাট, উলিপুরের চর বজরা ও রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের গাবুরহেলান গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো ২৪ ঘণ্টা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এ এলাকাগুলোতে বাঁধ মেরামতে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ : জেলার তাহিরপুর উপজেলায় টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে পানিবন্ধী পরিবারগুলোতে। পানিবন্দী হওয়ায় মানুষজন বাড়ি থেকে বের হতেও পারছে না। বন্যা কবলিত গ্রামগুলোতে অবস্থানকারী মানুষজন ত্রাণের জন্য অপেক্ষায় আছে। ত্রাণ না পাওয়ায় হাহাকার বিরাজ করছে। এদিকে কিছু কিছু গ্রামে সরকারিভাবে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে অর্থ, শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় খুবই সামন্য। সরকারী ত্রাণ দেয়া হচ্ছে এমন খবর পেলেই ছুটে আসছে দলে দলে ক্ষতিগ্রস্থরা।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিলন কান্তি তালুকদার জানান, উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে ৩টি, শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নে ৩টি, বালিজুড়ি ইউনিয়নে একটি ও বাদাঘাট ইউনিয়নের সোহালা গ্রামে একটি বন্যাশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পরিমাণ বেশী। ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে তা পরিমাণে কম।
এব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, তাহিরপুরের মানুষ বারবার ফসল হারিয়ে দিশেহারা এবং সাম্প্রতিক বন্যায় মানুষের বসতভিটা, রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় সকলেই দিশেহারা।
বগুড়া: বগুড়ায় বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার পানি। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে সারিয়াকান্দি, সোনাতালা ও ধুনট উপজেলার ৮০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পানিবন্দি ৮০টি গ্রামে ১৪ হাজার ৬০টি পরিবার রয়েছে। মোট লোক সংখ্যা ৫৭ হাজার ২৮০ জন। এছাড়া যমুনার পাশাপাশি বাঙালী নদীর পানিও বাড়ছে। যমুনা তীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার অনেক লোকজন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিচ্ছেন। সেখানে সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি, শৌচাগার এবং গো খাদ্যের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, তিনটি উপজেলায় ৮ হাজার ৫০৩ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, যমুনার পানি আরও বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে। তবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নিয়ে চিন্তার কারণ নেই।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের হার্ট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘন্টায় ৩৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বর্তমানে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কাজিপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম পানি বৃদ্ধির তথ্য জানিয়ে বলেন, আগামী ২-৩ দিন পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এক্ষেত্রে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে চরাঞ্চলে ফসলি জমিগুলো ডুবে যাচ্ছে। অপরদিকে, জেলা  প্রশাসন বন্যা মোকাবেলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে।
জামালপুর : অতিবৃষ্টি ও যমুনার পানি বাড়তে থাকায় জামালপুরে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বন্যা। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার ছয়টি উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ। সোমবার দুপুরে যমুনার পানি বিপদসীমার ১২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) আব্দুল মান্নান এ তথ্য দিয়ে নিশ্চিত করেছেন।  তিনি জানান, জামালপুর বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি বর্তমানে ২০ দশমিক ৭৬ সেন্টিমিটারে অবস্থান করছে। এ পয়েন্টে স্বাভাবিক পানির স্তর হচ্ছে ১৯ দশমিক ৫০।
এদিকে, অব্যাহত পানি বাড়তে থাকায় জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। জেলা দুযোর্গ ও ত্রাণ কর্মকর্তা কার্যালয়ের জরিপ অনুযায়ী এবারের বন্যায় পানিবন্দির সংখ্যা প্রায় এক লাখ ৯৪ হাজার। যদিও বাস্তবতায় এর সংখ্যা অনেক বেশি।  বন্যাকবলিত হয়েছে পুরো দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যেই দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ও বাসভবনে পানি ঢুকে পড়েছে। সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ও বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা এলাকাতেও ঢুকে পড়েছে পানি। এছাড়া মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ও নাংলা ইউনিয়নে ঢুকতে শুরু করেছে বন্যার পানি। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ কর্মকর্তা নায়েব আলী বলেন, জামালপুরের ছয়টি উপজেলায় এ পর্যন্ত পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এক লাখ ৯৪ হাজার মানুষ। এসব পানিবন্দি মানুষের মধ্যে ২৯০ মেট্রিক টন চাল, নগদ তিন লাখ টাকা ও ২০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
শেরপুর : শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে নালিতাবাড়ীতে চেল্লাখালি নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি ওঠায় ঝিনাইগাতী ও শেরপুর সদর উপজেলায় ৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির ফলে সদর উপজেলার চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের বেপারীপাড়া সংলগ্ন চরের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ৫০টি পরিবার বেপারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ঝিনাইগাতী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ৩৫ গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে সোমবার দুপুরে মহরশি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কিছু অংশে ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয় লোকজন ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম ভাঙন ও বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
এদিকে, ভারী বর্ষণের কারণে শেরপুর, নকলা ও নালিতাবাড়ী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। ঝিনাইগাতীর সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুন্নবী বলেন, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার কারণে উপজেলার ৩৭টি সহকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
নকলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের নদীভাঙন কবলিত এলাকায় সরজমিনে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে নকলার চরমধুয়া নামাপাড়া এলাকার কালাচান, ফয়েজ উদ্দিন, আলমাছ আলী, সদর আলী, আঙ্গুর মিয়া, আজিজুল ইসলাম, কাদির মিয়া, ইউসুফ আলী ও পবা মিয়াসহ অন্তত ১৫-১৬টি পরিবার বাড়ি ছাড়া হয়েছেন, সেই সঙ্গে হয়েছেন ভূমিহীন।
নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সারোয়ার আলম তালুকদার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়াসহ ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মনুমুখ, খলিলপুর ও আখাইলকুড়া ইউনিয়নের ২১টি গ্রাম; রাজনগর উপজেলার ফতেহপুর ও উত্তরভাগ ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম; কমলগঞ্জ উপজেলার পৌরসভা, আদমপুর, ইসলামপুর ও রহিমপুর ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়তে থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম।  এছাড়া অতিবৃষ্টিতে জেলার বড়েলেখা, জুড়ি ও কুলাউড়ার নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন গ্রামের মানুষ।
মৌলভীবাজার পৌরসভার সৈয়ারপুর এলাকায় মনু প্রতিরক্ষা বাঁধের ভেতরের শতাধিক পরিবার স্থানীয় লোকনাথ মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ তাদের কাছে পৌঁছায়নি।  মন্দিরে আশ্রয় নেওয়া মালতি সূত্রধর বলেন, এখানে দু’দিন হলো কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছি। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে। এখানে রয়েছে খাবারের তীব্র সংকট। কোনো ত্রাণও পাচ্ছিনা। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনিরুজ্জামান বলেন, অন্যান্য এলাকায় ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে। যেসব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়নি, সেসব এলাকায় দ্রুত ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে পৌর এলাকায় ত্রাণের ব্যবস্থা করবে পৌরসভা, আমরা কেবল মানবিক কারণে দিতে পারি।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ কুশিয়ারা ডাইক ভেঙে নবীগঞ্জ উপজেলার ৫০ গ্রাম তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ভাটি এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানিবন্দি এসব মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে বন্যার পানি বৃদ্ধি থাকায় এ বাঁধ এখনই মেরামত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান বলেন, ‘প্রতি ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা আশঙ্কা করছি, কুশিয়ারা ডাইক ভেঙে গেছে তাই এটা মেরামত করা হচ্ছে। বিশেষ করে আউশকান্দি, ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়ন বেশি ক্ষতি হয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে সবসময় হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারবেন পানিবন্দি লোকজন।’ হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের জন্য আমাদের লোকজন কাজ করছে। ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে আমরা সেখানে বালুর বস্তা ফেলেছি। ভাঙন ঠেকাতে জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
রাঙ্গামাটি : বৃষ্টিপাত কমে এলেও পাহাড়ী ঢলে রাঙ্গামাটির ৪ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বিলাইছড়ির ফারুয়া বাজার ও বরকলের কলাবুনিয়া বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি, ও বিলাইছড়ির নিম্নাঞ্চল এখনো পানির নিচে। বান্দরবানে পানিবন্দী কয়েক হাজার মানুষ। বন্যার পানিয়ে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় গেলো বুধবার থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে সারা দেশের সাথে সড়ক যোগাযোগ।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও তিন শতাধিক পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি-ঘরে ফিরতে পারেনি । টানা ৮ দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মেরুং ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের হাজারো মানুষ । দুর্গত এলাকায় ত্রাণ ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট চলছে। বন্যার কারনে বন্ধ রয়েছে ২৭ টি সরকারি প্রাইমারি স্কুল।
আমাদের সংবাদদাতারা আরো জানান :
সাতকানিয়ার অনেক এলাকা এখনও পানিতে তলিয়ে আছে
চট্টগ্রাম ব্যুরো : দক্ষিণ চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অবিরাম বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে বান্দরবানের প্রধান প্রধান সড়ক প্লাবিত হওয়ায় সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। গত ১৪ জুলাই থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় শঙ্খ নদী থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যায় বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কের বাজালিয়া এলাকায় সড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সোমবার ১৫ জুলাই সপ্তম দিনের মতো সারাদেশের সঙ্গে বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় দুপুরের পর বন্যায় প্লাবিত অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু প্লাবিত এলাকাগুলোর অধিকাংশ বসতবাড়ি এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে।রুমা সড়কে ১২ রসধমব মাইলের পরে রাস্তা ধ্বসে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা ।রোয়াংছড়ি, রাঙ্গামাটি সড়কে বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধ্বসে সড়কের উপর মাটি এসে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।  সাতকানিয়া উপজেলা বন্যার পানিতে ধসে পড়েছে একটি পাকা  দোতলা বাড়ী। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বাজালিয়া  ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।  ধসে যাওয়া বাড়িটির মালিক ওই এলাকার মো. খলিল সওদাগরের বলে জানা গেছে।দক্ষিন চট্টগ্রাম থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে,বৃষ্টি কমলেও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সাতকানিয়ার প্রায় সবকটি ইউনিয়ন এখনও পানিমগ্ন। প্রায় চার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কের পাঁচ কিলোমিটার এলাকা।বর্ষণ আর ত্রিপুরার ইছামতি ও হালদা নদী বেয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী, বোয়ালখালী, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, রাউজান, ফটিকছড়ি ও সীতাকু- উপজেলার নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। কিছু কিছু এলাকা থেকে ধীরে ধীরে পানি সরে যেতে শুরু করেছে। এসব এলাকার সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, বানভাসি মানুষের জন্য সরকারি তরফে মোট ৬৫ মেট্রিক টন চাল ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, নগদ দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক তারেক সিদ্দিকী জানান, রোববার বিকাল তিনটা পর্যন্ত সাঙ্গু নদীর পানি বান্দরবান পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪৭ সেন্টিমিটার এবং দোহাজারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া, চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, মাতামুহুরী, হালদাসহ সবকটি নদীর পানিও বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে।ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, গত কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণে ১৪ উপজেলাই কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। এতে সাড়ে ৩ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর সম্পূর্ণ এবং এক হাজারের কিছু বেশি বাড়ি-ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব উপজেলায় প্রাথমিকভাবে বরাদ্দকৃত নগদ ১০ লাখ টাকা এবং ১৬৬ টন চাল বন্যাদুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।পরিস্থিতি পরিদর্শনে তিনজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে বন্যাদুর্গত এলাকায় পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের জরুরি ওষুধ ও নিরাপদ পানিসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পাশাপাশি পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অতিদুর্গত এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা ও ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, সাতকানিয়ায় বন্যর্তদের পাশে দাঁড়ালেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা শামসুল ইসলাম। তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে সাতকানিয়ার বন্যার্ত মানুষের মাঝে অবিলম্বে সরকারি ত্রাণ পৌছানোর দাবি জানান।সোমবার সারাদিন তিনি সাতকানিয়ার বিভিন্ন বন্যাপ্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা জামায়াতের আমীর জাফর সাদেক, সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা আবুল ফয়েজ, বর্তমান আমীর মাওলানা কামাল উদ্দিন, সেক্রেটারি আব্দুস সোবহান, চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ তারেক হোসাইন, ঢেমশা ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি সিজাম উদ্দিন ও নলুয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি দিদারুল ইসলামসহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য মাওলানা শামসুল ইসলাম বলেন, সাতকানিয়ার মানুষ স্মরণকালের ভয়াবহতম বন্যায় প্লাবিত হলেও এখনো সরকারি ত্রাণ পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌছায়নি। সাতকানিয়ার প্রায় চারলক্ষ মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছে জানিয়ে অবিলম্বে সরকারি উদ্যোগে পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ ও ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
এদিকে চন্দনাইশের পশ্চিমাঞ্চল বরকল-বরমা, সাতবাড়ীয়া, বৈলতলীর লাখ লাখ মানুষ বন্যায় ডুবছে। এসব মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। পাহাড়ী ঢলে সাঙ্গু নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় এবং বরমার মাইগাতা ছেমন্দী সাঙ্গু নদীর মোহনায় বেড়ীবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়াতে গত বছরের ন্যায় এবারও ব্যাপক বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পাহাড়ী ঢল থেকে আসা উজানের পানিতে বাড়ী-ঘর তলিয়ে গেছে। পাহাড়ী ঢল সাঙ্গু নদীর পানির ঢল এবং বৃষ্টির পরিমান বেড়ে যাওয়াতে চন্দনাইশ পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। অনেক এলাকায় ভেসে গেছে পুকুরের মাছ, তলিয়ে গেছে ফসলের জমি ও বসতি। বন্যায় ডুবছে জনপদ। এসব এলাকাকে দুর্গত অঞ্চল ঘোষণার দাবীতে ১৫ জুলাই বরকল মৌলভী বাজারস্থ দিদার মার্কেটে বিকাল ৩ টায় বরকল বরমা নাগরিক ফোরোমের উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ফোরামের সভাপতি কাজী মো. আলী হাসান। সভায় বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নুরুল আলম মাস্টার,সাংবাদিক আবু তোরাব, মো. আবু সালেক, আব্বাছ উদ্দিন, আবদুর রশিদ, শহীদুল ইসলাম, এম জাহেদ আজগর, এরশাদ বিন দেলোয়ার, মো. মুসা সওদাগর, এমরান হোসেন, আবু জাবেদ সোহেল, মো. মফিজুর রহমান, মাস্টার সোহেল, ডা. গোলাম মোস্তফা, মো. মোর্শেদ, মাওলানা আবদুল গফুর প্রমুখ। সভায় অবিলম্বে বরকল বরমাকে বন্যা দুর্গত অঞ্চল ঘোষণা করে সরকারীভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার জোর দাবী জানান এবং বিত্তবান জনসাধারণকে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান।
গাইবান্ধায় আরও ১৫ গ্রাম প্লাবিত
গাইবান্ধা থেকে জোবায়ের আলী : টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নামছে পাহাড়ি ঢলে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ২টি বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে নতুন করে আরও ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
সোমবার দুপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে ১০৯ সে. মি., সুন্দরগঞ্জের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৬ সে. মি. এবং ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে ৬৬ সে.মি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গাইবান্ধায় এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পাউবোর অবহেলায় একের পর এক বাঁধ ভাঙছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সোমবার ভোরে কাতলামারী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২০০ ফুট ধসে যাওয়ায় নতুন করে গজারিয়া, উদাখালি, উরিয়া, কাতলামারী, মুন্সিপাড়াসহ প্রায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে । কয়েক ঘণ্টা যেতে না যেতেই সদর উপজেলার খোলাহাটী ফকিরের পাড়ায় ঘাঘট নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৫০ ফুট অংশ ভেঙে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে
এ বিষয়ে ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারী ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুর রহিম জাগো জানান, বিভিন্ন সময় পাউবোকে তলব করেও বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়নি। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীবেষ্টিত ফুলছড়ির উপজেলার উড়িয়া, উদাখালী, এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, গজারিয়া, ফুলছড়ি ইউনিয়ন ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার মোল্লারচর, কামারজানী এবং সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী, সাঘাটা, হলদিয়া, জুমারবাড়ি ইউনিয়নের অন্তত ৫০ গ্রামের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে কাঁচা-পাকা রাস্তা, পাট ক্ষেত, ধানের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসলি জমি। ফলে এসব এলাকার মানুষ, গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এতে অন্তত লক্ষাধিক মানুষের বসতভিটায় পানি ঢুকে পড়েছে। বিভিন্ন বাঁধ ভেঙে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের সর্বশেষ তথ্য অনুয়ায়ী গাইবান্ধার ৪ উপজেলার সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তাদের জন্য ৬৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বন্যা কবলিত ৪ উপজেলায় ২৪০ মে. টন চাল, নগদ ২ লাখ টাকা, ২ হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান  জানান, রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। যা মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যাবধানে সোমবার প্রায় দিগুণ বেড়ে ১০৯ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।। ঘাঘট নদী গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জের কাউনিয়া পয়েন্টে ৬ সে.মি কমে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতোয়া ও যমুনা নদীর পানি যে কোনো সময় বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের উত্তর সাথালিয়া বৌ-বাজার সোনাইল বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় পাশর্^বর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলী জমি।
এ ছাড়াও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় হাসিলকান্দি, হাটবাড়ি, বাঁশহাটা, গোবিন্দী গ্রামের বন্যা কবলিত পরিবারের লোকজন হাসিলকান্দি, ভরতখালী বন্দর স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেকেই গরু, ছাগল নিয়ে বন্যা দুর্গত এলাকাতেই রয়েছে। প্লাবিত ওইসব গ্রামের মানুষ গবাদিপশু পাখি নিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এসব এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষেরা বেকার হয়ে পড়ায় তাদের মধ্যে খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
দিন মজুররা বেশি সমস্যা রয়েছে, তাদের কাজকর্ম না থাকায় পরিবারে খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এ পর্যন্ত সরকারি কোন ত্রাণসামগ্রী পৌছেনি।
 গাইবান্ধায় ১৪৫ বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
গাইবান্ধার চরাঞ্চল ও নদীবেষ্টিত এলাকার শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ১৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলী বন্যাকবলিত ১৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেন।
শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলী বলেন, বন্যার কারণে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি উঠেছে। বিদ্যালয়গুলো পানিবন্দি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানোর পরিবেশ নেই। বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে গিয়ে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসা নিরাপদ নয়। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এসব কারণে বন্যাকবলিত ১৪৫টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ভুরুঙ্গামারীতে বন্যা পরিস্থিতিরি অবনতি 
ভুরুঙ্গামারী সংবাদদাতা : কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত বৃষ্টিতে দুধকুমর নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে দুধকুমার নদের পানি।
উপজেলার দুধকুমার নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শত শত হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে খাবার পানি ও গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
চর-ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ইসলামপুর চরের বজিলা খাতুন জানান, তার স্বামী দিনমুজুরের কাজ করে সংসার চালায়। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। তিলাই ইউনিয়নের দঃ তিলাই গ্রামের কামাল হোসেন জানান, ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে খাবার সংকটে পড়েছেন তিনি। নদী তীরবর্তী ও দ্বীপচরের মানুষজন বন্যার কবলে পড়ায় দূর্ভোগ বেড়েছে তাদের।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এইচ এম মাগফুরুল হাসান আব্বাসী জানান,  সোমবার বন্যার্তদের জন্য ২শ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরন করা হয়েছে।  আরও  ৩শ প্যাকেট শুকনো খাবারের প্রস্তুুতি নেয়া হয়েছে।  এছাড়াও বন্যা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে বলে তিনি জানান।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুফাখ্খারুল ইসলাম জানান, উপজেলার ১০টি  ইউনিয়নে  বন্যার্তদের জন্য ১৫মেঃ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মো: লাভলু শেখ, লালমনিরহাট : অস্বাভাবিক হারে ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ৫০ সে. মিটার উপরে দিয়ে এবং তিস্তার পানি ১৫ সে. মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষন ও পাহাড়ী ঢলে লালমনিরহাটে ৫ উপজেলায় প্রায় ২১ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউ.পি চেয়ারম্যানগণ সোমবার জানান। তবে কয়েক দিনের এই বন্যার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে তিস্তা ও ধরলার তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের পরিবার গুলো। তারা কোন কাজ কাম করতে পারছে না। অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে তারা। লালমনিরহাট জেলার ত্রাণ কর্মকর্তা আলী হায়দার সোমবার জানান, লালমনিরহাট সদর উপজেলার পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা বেড়েছে। তবে সংখ্যায় কত বেড়েছে তা জানাতে পারেনি। ত্রাণ শাখার তথ্য মতে রোববার রাত পর্যন্ত ১৬ হাজার ৮ শত ১৬টি পরিবার পানিবন্দী। বন্যা কবলিতদের মাঝে ২শত ৪৫ মে. টন চাউল ও নগদ ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সোমবার দুপুর ১২ টা পর্যন্ত তিস্তার পানি ১৫ সে. মিটার নিচ দিয়ে এবং ধরলার পানি ৫০ সে. মিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী বজলে করিম সোমবার এ তথ্য জানান। অপর দিকে বন্যার পানি কমে না যাওয়া পর্যন্ত লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলার মাধ্যমিক ও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিলে মোট ৪৪টি বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি
জুলফিকার আলম, জামালপুর সংবাদদাতা : যমুনা ও  বক্ষ্মপুত্র নদ নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে জামালপুরের বন্যা দেখা দিয়েছে। ১৫ জুলাই দুপুরে ৩ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমার ১২৬ সেন্টি মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত  হচ্ছে জানিয়েছেন, জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর নির্বাহী প্রকৌশলী নবকুমার চৌধুরী এবং পানি মাপক গেজ  পাঠক আব্দুল মান্নান। জেলা ত্রান ও পুর্ণবাসন অফিস সুত্রে জানা যায়, জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, জামালপুর সদর ও সরিষাবাড়ী এই ৭টি উপজেলার মধ্যে ৪২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি, বেলগাছা, চিনাডুলী,সাপধুরী, পার্থশী, নোয়ারপাড়া, ইসলামপুর সদর, পলবান্দা, ও ইসলামপুর পৌরসভার সিংহ ভাগ এলাকা এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, বাহাদুরাবাদ, চরআমখাওয়া ইউনিয়নে বন্যার পানিতে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকার প্রায় ৫০হাজার মানুষ পানিবান্দ হয়ে পড়েছে।
এদিকে জেলা ত্রান ও পুর্ণবাসন অফিস সুত্রে জানা যায়, ৭টি উপজেলার ৬৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৪২ টি ইউনিয়ন প্রায় প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৩৯ হাজার পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ২ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা আশ পাশের উঁচু রাস্তায় বাঁধের উপর প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুসসহ গৃহপালিত পশু গরু, মহিষ, ছাগল, হাঁস মুরগী পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় বন্যা কবলিত মানুষ গরু উঁচু বাঁধে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নীচে বৃষ্টিতে ভিজে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ২০ হাজার হেক্টর জমির ফসল, রোপা আমন ধান, বীজতলা, আখ, পাট, কাঁচা শাখ সবজি, তরিতরকারী বন্যার পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হচ্ছে। এদিকে সারা জেলায় ১৮১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সারা জেলার মোট ২৫০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানিতে সয়লাভ করায়   আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য বন্ধ ঘোষণনা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহিতদুল ইসলাম। ইসলামপুর উপজেলা সদরের সাথে ৮টি ইউনিয়নে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।  অপরদিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চত্বরে হাটু পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা ত্রান ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা মো. নায়েব আলী জানান, ১৫ জুলাই বন্যায় দুর্গতদের জন্য ইসলামপুর ৭০ মে: টন, দেওয়ানগঞ্জ ৭০ মে: টন, মাদারগঞ্জ ৩০ মে:টন এবং সরিষাবাড়ী উপজেলায় ৩০ মে: টন মোট ২০০ মে: টন চাল সরকারী ভাবে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
আব্দুস ছামাদ খান, বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জের কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবল স্রোতে উপজেলার নাটুয়ারপাড়া এলাকা রক্ষা বাঁধের মাথায় ধস নামে, সোমবার দুপুর পর্যন্ত ওই বাঁধের প্রায় তিনশ মিটার এলাকা ধসে গেছে। পানির প্রচন্ড ঘূর্ণাবর্তের কারণে ধসে গেছে নাটুয়ারপাড়া থেকে খাসরাজবাড়ি ইউনিয়নের যাবার প্রধান রাস্তাটিও। এছাড়া রূপসা থেকে বালিয়াকান্দি পর্যন্ত রাস্তার একাংশ ধসে গেছে। চরপানাগাড়ি থেকে জজিরা যাবার একমাত্র রাস্তাটিও সোমবার ভোরে ধসে গেছে। যমুনা গর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকায় নাটুয়ারপাড়া হাট ও বাজারের ৪ শতাধিক ব্যবসায়ী ও ভাঙন এলাকার জনগণ চরম ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে।স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী দেলশাদ সরকার জানান, রবিবার দুপুরে প্রবল স্রোতের আঘাতে নাটুয়ারপাড়া হাট-বাজারের পূর্ব পাশের বাঁধের মাথায় ধস দেখা দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় দুইশ’ মিটার বাঁধ যমুনার নিচের দিকে দেবে যায়।’ বিকেলে ওই বাঁধের ভাঙন দেখতে যান কাজিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার একেএম শাহা আলম মোল্লা। তারা সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ভাঙ্গন ঠেকাতে জরুরী ব্যাবস্থা গ্রহণ করার জন্য জানিয়েছেন।

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --