July 2, 2019
জুলাই ২, ২০১৯ বরগুনায় রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড র‍্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: বরগুনায় রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড

আলোর পরশ নিউজ: সাতক্ষীরা:   বরগুনায় রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড র‍্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার

বরগুনা: বরগুনা রাস্তায় ফেলে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার অন্যতম প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার ভোর রাত ৪টার দিকে জেলার পুরাকাটার পায়ারা নদীর পড়ে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, এক রাউন্ড গুলি, দুইটি শর্টগানের গুলির খোসা এবং তিনটি দেশীয় ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এএসপি শাজাহানসহ চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

নয়ন বন্ডের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মারুফ হোসেন এ খবর নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রিফাত হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ডকে গ্রেফতার করতে বরগুনা সদর উপজেলার বুড়ির চর ইউনিয়নের পুরাকাটা নামক এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায় নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা।

পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলির এক পর্যায়ে নয়ন বন্ড বাহিনী পিছু হটে। পরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি করে নয়ন বন্ডের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নয়ন বন্ডের বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এসব মামলায় নয়ন বন্ডকে অভিযুক্ত করে বিভিন্ন সময় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। এসব মামলার মধ্যে দুইটি মাদক মামলা, একটি অস্ত্র মামলা এবং হত্যাচেষ্টাসহ পাঁচটি মারামারির মামলা রয়েছে।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় মামলার এজাহারভুক্ত ১১ নম্বর আসামি অলি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা অভিযুক্ত তানভীর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এছাড়া, নাজমুল হাসান, সাগর ও সাইমুন নামে অপর তিনজন বর্তমানে পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন।

এদিকে মামলার ১২ নম্বর আসামি টিকটক হৃদয় গ্রেফতার হলেও তিনি বরগুনা জেলা পুলিশের কাছে পৌঁছায়নি।

দুপুরে জেলা পুলিশ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, রিফাত হত্যাকাণ্ডে সর্বশেষ গ্রেফতার হওয়া পাঁচ আসামি সাইমুন, সাগর, অলি, নাজমুল ও তানভীরকে সোমবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়।

প্রসঙ্গত নিহত রিফাত শরীফের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামে। তার বাবার নাম আ. হালিম দুলাল শরীফ। মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন রিফাত।

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রী মিন্নিকে বরগুনা সরকারি কলেজে নিয়ে যান রিফাত। কলেজ থেকে ফেরার পথে মূল ফটকে নয়ন, রিফাত ফরাজীসহ আরও দুই যুবক রিফাত শরীফের ওপর হামলা চালান। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে রিফাত শরীফকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন তারা।

রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি দুর্বৃত্তদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই হামলাকারীদের থামানো যায়নি। তারা রিফাত শরীফকে উপর্যুপরি কুপিয়ে রক্তাক্ত করে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন রিফাত শরীফকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান।

পরে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রিফাত শরীফের মৃত্যু হয়।

নিহতের পরিবার জানায়, রিফাতকে কুপিয়ে হত্যায় অংশ নেয় নয়ন বন্ডসহ ৪-৫ জন। রিফাতের সঙ্গে দুই মাস আগে পুলিশলাইন সড়কের আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ে হয়। বিয়ের পর নয়ন মিন্নিকে তার প্রেমিকা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিতে থাকেন।

রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, নয়ন প্রতিনিয়ত আমার পুত্রবধূকে উত্ত্যক্ত করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট দিত। এর প্রতিবাদ করায় আমার ছেলেকে নয়ন তার দলবল নিয়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে মূল আসামি নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

বিস্তারিত আসছে——

 

রিফাতকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা

এমন অসম্ভব, অমানবিক, নৃশংস, ভয়ঙ্কর সমাজবাস্তবতা বহাল রেখে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন কোনো কিছুরই সফল পরিণতি দেখা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।

অন্যভাবে বলা যায়- অন্যায়, দুর্নীতি ও সহিংসতা বহাল রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে যাওয়া সিসি ক্যামেরার রোমহর্ষক দৃশ্য মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে দর্শক সাক্ষী রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিশীল অবস্থা প্রমাণ করেছে বরগুনার সন্ত্রাসীরা।

সিনেমার ভয়ঙ্কর দৃশ্যের যেন বাস্তব রূপায়ণ। প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে চলছে এক তরুণকে। স্ত্রী উদ্ভ্রান্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে স্বামীকে বাঁচাতে। টেনে সরাতে চাচ্ছে অস্ত্রধারীদের। ওরা ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে মেয়েটিকে।

অদূরে দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন। অমন পরিস্থিতিতেও নির্বিকারভাবে মোবাইল ফোন নাড়াচাড়া করছে। ভাবে বোঝা যায়, এদের অনেকে সন্ত্রাসীদের দোসর। মানবতা বিপন্ন হতে আর বাকি কোথায়!

এদেশে এখন সব দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী সবাই সাধারণ মানুষের কাছে অপ্রয়োজনীয় হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে। সক্রিয় আছেন শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর আদালতের বিচারপতিরা।

প্রধানমন্ত্রী না বলা পর্যন্ত কোনো দায়িত্বই যেন পালিত হয় না। এত বড় মাথাভারি প্রশাসন থাকার পরও শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। একটি ছোটখাটো আন্দোলনের নিষ্পত্তির জন্যও সংশ্লিষ্টরা এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অন্যদিকে দেশের আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনের জনস্বার্থে যেসব বিষয়ে ভূমিকা রাখার কথা, সেসব প্রতিষ্ঠান রহস্যজনক কারণে নীরব থাকায় প্রতিটি বিষয়ে আদালতকেই আদেশ জারি করতে হচ্ছে।

তাহলে কি প্রশাসনের সব স্তর ব্যর্থ হয়ে গেল? শেষ রক্ষার জায়গাগুলো অগত্যা সক্রিয় থাকায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আদালতের মাননীয় বিচারপতিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এখন ভয় হয়, অতি ব্যবহারে এসব প্রতিষ্ঠানের ধার যদি কমে যায়! এর আলামত কি দেখতে পাচ্ছি না?

মহামান্য আদালত সেই কবে পা হারানো রাসেলকে ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকা দেয়ার জন্য গ্রিনলাইন বাস কোম্পানিকে আদেশ দিয়েছিলেন। বাস কোম্পানি সেই আদেশ নির্ধারিত সময়সীমায় পালন করেনি। পরে আবার আদালতকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে দ্বিতীয়বারের মতো আদেশ জারি করতে হয়।

পত্রিকার সূত্রে জানলাম, বরগুনার মর্মস্পর্শী সন্ত্রাসী কাণ্ডের প্রতিক্রিয়া ফেসবুকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি যথার্থই বলেছেন, ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় বরগুনার ঘটনাটি মানুষ দ্রুত জানতে পেরেছে এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছে।

আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে এমন ঘটনা আরও অনেক ঘটছে এদেশে। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন একই দিনে রাজশাহীর তানোর বাজারে আম বিক্রি করতে এসে প্রতিপক্ষের আক্রমণে একইভাবে নিহত হয়েছে এক তরুণ।

বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করার নায়ক নয়ন আগে থেকেই সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশের খাতায় এর নাম বারবার যুক্ত হয়েছে। আগেও গ্রেফতার হয়েছিল সে। আট-দশ মামলার আসামি নয়ন।

শেষ মামলায় ১২ লাখ টাকার মাদকসহ গ্রেফতার হয়। আমাদের জানামতে, এসব মামলা জামিন অযোগ্য। ভাবতে অবাক লাগে এমন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী জামিন পেয়ে যথারীতি প্রকাশ্যে খুন খারাবি করে যাচ্ছে।

এসব কারণে সাধারণ মানুষ তো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেই। রিফাত আক্রান্ত হওয়ার সময় কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এদেরও আইনের আওতায় আনার কথা বলেছেন তিনি।

অবশ্য আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হতে পারিনি। খুনির সহযোগী বন্ধু ছাড়াও সাধারণ মানুষদের অনেকে সেদিন এগিয়ে আসেনি রিফাতকে রক্ষা করতে। আমরা মনে করি এর পেছনে যথার্থ কারণও রয়েছে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতা সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার ভয় তৈরি করেছে। সাধারণ মানুষ এখন আর বিবেকের দায়ে সন্ত্রাস মোকাবেলায় সাহসী হতে পারে না। তাদের মধ্যে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, এসব সন্ত্রাসী অনেকেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকেন।

পত্রিকার খবরে জানা গেল, ফরাজী উপাধিধারী দুই সন্ত্রাসী ভাই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সরকার দলীয় সাবেক এমপির আত্মীয়। তার অর্থ এরা চিহ্নিত প্রভাবশালী সন্ত্রাসী। সাধারণ মানুষ জানে এদের সাতখুন মাফ।

গুরুতর অন্যায় করেও পুলিশের দুর্বল রিপোর্টের কারণে অথবা আদালতের ‘সন্তুষ্টি’র জন্য এরা জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। সুতরাং কে সাহসী হবে নিজের জীবনের নিরাপত্তা বিপন্ন করে মানবতার ডাকে ছুটে আসতে!

যে দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া সাধারণ গতিতে আইন সক্রিয় হয় না, সেখানে বিপন্ন মানুষের আশার বাতি নির্বাপিত হবেই। তা না হলে মর্মস্পর্শী সাগর-রুনী হত্যা, কুমিল্লার তনু হত্যা, চট্টগ্রামের মিতু হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ না দেয়ায় এসব মামলার ভবিষ্যৎ তলিয়ে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে।

আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ায় নুসরাত হত্যার রহস্য উন্মোচনে ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সক্রিয় হতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দ্রুততার সঙ্গে চার্জশিট দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু করাতে পেরেছে

 

একইভাবে বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পর সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। মন্ত্রীগণ দমে দমে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। আর জানাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা।

আমাদের বিজ্ঞ মন্ত্রীরা এমন রোমহর্ষক ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দায় এড়াতে চান- বিষয়টি খুব স্বস্তির নয়। নরসিংদীর কলেজছাত্রী ফুলন বর্মণকে পুড়িয়ে হত্যা, রাজশাহীর তানোরের যুবককে হত্যা, সোনারগাঁওয়ে মহিলা ইউপি সদস্যকে খুন করা, একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু এমন অনেক ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনায়’ সয়লাব হচ্ছে পত্রিকার পাতা।

বাস্তবতা বিচারে মানতেই হবে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে কোনো সংকট নেই। তারা রাজনৈতিক প্রভাবকে উপেক্ষা করে স্বাধীন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। না হলে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে রিফাত খুন হওয়ার পরও স্থানীয় পুলিশ কেন মামলা করার অপেক্ষায় বসে রইল।

রিফাতের পরিবারের সে সময় তো মামলা করার চেয়ে জরুরি ছিল হতভাগ্য রিফাতকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করা। এসব বাস্তবতায় পুলিশ তো অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই বাদী হয়ে আসামি গ্রেফতার করে।

সরকারদলীয় নেতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়ার খুঁটির জোরে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। সব দেখেও কেউ টিকি ছুঁতে পারছে না। একদিকে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে, অন্যদিকে মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী সরকারদলীয় আশ্রয়ে থেকে মূর্তিমান যমদূত হয়ে ওঠে।

১২ লাখ টাকার মাদকসহ ধরা পড়েও আসামি নয়ন আদালত থেকে জামিন নিয়ে বহাল তবিয়তে সন্ত্রাস করে। পুলিশের কাছে চিহ্নিত এবং অতি পরিচিত সন্ত্রাসীরা খুন করে আর পুলিশ মামলার অপেক্ষায় বসে থাকে।

অপরাধ ঘটানোর কয়েক ঘণ্টা পর খুনির বাড়িতে গিয়ে তালাবদ্ধ ঘর দেখতে পায়। ততক্ষণে নিশ্চয় পুলিশকে স্বাগত জানানোর জন্য নয়ন আর তার পরিবার বসে থাকবে না।

এত হৈচৈয়ের পরও এই লেখা প্রস্তুতির সময় পর্যন্ত মূল আসামিরা ধরা পড়েনি (প্রত্যাশা করব লেখাটি প্রকাশের আগে ধরা পড়বে)। বর্তমান দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সময়ে পুলিশ আর দুদকের আসামি ধরা ধরা খেলা দেখে বিরক্ত মানুষ।

সাধারণ মানুষ মনে করে কোনো অঘটনের পর চিহ্নিত-আলোচিত দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রাখার কথা এদের। কিন্তু বাস্তবে কি তা ঘটে?

না হলে নুসরাত হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্ট আলোচিত ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতারে এত টালবাহানা দেখতে হল কেন? বহু আলোচিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেরানি আফজাল দম্পতি শত শত কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে কামিয়ে দুদকের জাল ছিঁড়ে অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গেল কেমন করে?

থানায় কমপক্ষে আটটি মামলা থাকা ও প্রকাশ্যে খুন করা নয়ন গং বরগুনার মাটি কাঁপিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় কেমন করে? আর প্রকাশ্যে এমন খুনের ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়ও বা কেমন করে? এরপরও কি সরকারের সদিচ্ছা, পুলিশের পারঙ্গমতা ও সততা নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তুলবে না?

দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন যে, এদেশের রাজনৈতিক সরকারই বলি আর বিরোধী দলই বলি, সবাই প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে। নিজেদের প্রশংসার যোগ্য করে তোলার চেয়ে বলপ্রয়োগে যেন প্রশংসা পেতে চায়।

বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপির মতো বিরোধী দলকে তেমনভাবে গণ্য না করলেও চলে। সরকারের নানামুখী ব্যর্থতার অভিযোগ এনে গৎবাঁধা বক্তৃতা সাধারণ মানুষ তো নয়ই, বিএনপির নিজ কর্মী-সমর্থকদেরও তেমন আকৃষ্ট করে না।

বিএনপির ক্ষমতায় থাকা সময়টা তো মানুষ দেখেছে। তাই চালুনি অন্যের ছিদ্রান্বেষণ করলে তা হাস্যকরই হয়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমান সরকার তো মানুষের সামনে ভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে দাঁড়িয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে শেখ হাসিনার সরকার।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও এখন অনেক দুর্বল। সরকারের পথচলায় বড় রকমের চ্যালেঞ্জ ছুড়তে তারা পারবে না। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা মতো শক্ত হাতে নিজ দলের জঞ্জাল সাফ করার এখনই সময়।

কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পুরনো ধারার দলপ্রীতি আর স্বজনপ্রীতি এখনও সক্রিয়। আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের নেতৃত্বের বিশ্বাস করা উচিত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল।

তাই এদেশের মানুষের বড় অংশের বুকের ভেতর এই ঐতিহ্যবাহী দলটির আদর্শের প্রতি সমর্থন রয়েছে। এ কারণে আমরা মনে করি, ক্ষতিকর জঞ্জাল সাফ করে অপেক্ষাকৃত পরিশুদ্ধ মানুষদের কাছে টেনে একটি চমৎকার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়া যায়। ভাবা উচিত পেশিশক্তির চেয়ে আদর্শিক শক্তি অনেক বেশি শক্তিশালী।

বারবার নৃশংস সন্ত্রাস ও খুনখারাবির পেছনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তির প্রশ্রয়ের কথা উঠে আসবে কেন! কেন সব অন্যায়ই সরকারের জিরো টলারেন্সের আওতায় আসবে না।

এই যন্ত্রযুগে মানুষ অনেক বেশি তথ্যসমৃদ্ধ। উন্নয়নের একপিঠের ছবি দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে কিন্তু বুঁদ করে রাখা যাবে না। ভালো খেয়ে-পরে থাকার পাশাপাশি মানুষ নির্ভয়ে ও স্বস্তিতে জীবন নির্বাহ করতে চায়।

গর্বিত বাঙালি হয়ে এদেশে বাস করতে চায়। দমবন্ধ অবস্থায় হতাশা নিয়ে বাঁচতে চায় না।

ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

shahnawaz7b@gmail.com

বিস্তারিত আসছে——

 

রিফাতকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা

এমন অসম্ভব, অমানবিক, নৃশংস, ভয়ঙ্কর সমাজবাস্তবতা বহাল রেখে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন কোনো কিছুরই সফল পরিণতি দেখা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে।

অন্যভাবে বলা যায়- অন্যায়, দুর্নীতি ও সহিংসতা বহাল রেখে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে যাওয়া সিসি ক্যামেরার রোমহর্ষক দৃশ্য মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। প্রকাশ্য দিবালোকে দর্শক সাক্ষী রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিশীল অবস্থা প্রমাণ করেছে বরগুনার সন্ত্রাসীরা।

সিনেমার ভয়ঙ্কর দৃশ্যের যেন বাস্তব রূপায়ণ। প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে চলছে এক তরুণকে। স্ত্রী উদ্ভ্রান্তের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ছে স্বামীকে বাঁচাতে। টেনে সরাতে চাচ্ছে অস্ত্রধারীদের। ওরা ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে মেয়েটিকে।

অদূরে দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে আছে কয়েকজন। অমন পরিস্থিতিতেও নির্বিকারভাবে মোবাইল ফোন নাড়াচাড়া করছে। ভাবে বোঝা যায়, এদের অনেকে সন্ত্রাসীদের দোসর। মানবতা বিপন্ন হতে আর বাকি কোথায়!

এদেশে এখন সব দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, মন্ত্রী সবাই সাধারণ মানুষের কাছে অপ্রয়োজনীয় হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে। সক্রিয় আছেন শুধু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর আদালতের বিচারপতিরা।

প্রধানমন্ত্রী না বলা পর্যন্ত কোনো দায়িত্বই যেন পালিত হয় না। এত বড় মাথাভারি প্রশাসন থাকার পরও শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে। একটি ছোটখাটো আন্দোলনের নিষ্পত্তির জন্যও সংশ্লিষ্টরা এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

অন্যদিকে দেশের আমলাতন্ত্র ও প্রশাসনের জনস্বার্থে যেসব বিষয়ে ভূমিকা রাখার কথা, সেসব প্রতিষ্ঠান রহস্যজনক কারণে নীরব থাকায় প্রতিটি বিষয়ে আদালতকেই আদেশ জারি করতে হচ্ছে।

তাহলে কি প্রশাসনের সব স্তর ব্যর্থ হয়ে গেল? শেষ রক্ষার জায়গাগুলো অগত্যা সক্রিয় থাকায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আদালতের মাননীয় বিচারপতিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এখন ভয় হয়, অতি ব্যবহারে এসব প্রতিষ্ঠানের ধার যদি কমে যায়! এর আলামত কি দেখতে পাচ্ছি না?

মহামান্য আদালত সেই কবে পা হারানো রাসেলকে ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকা দেয়ার জন্য গ্রিনলাইন বাস কোম্পানিকে আদেশ দিয়েছিলেন। বাস কোম্পানি সেই আদেশ নির্ধারিত সময়সীমায় পালন করেনি। পরে আবার আদালতকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে দ্বিতীয়বারের মতো আদেশ জারি করতে হয়।

পত্রিকার সূত্রে জানলাম, বরগুনার মর্মস্পর্শী সন্ত্রাসী কাণ্ডের প্রতিক্রিয়া ফেসবুকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি যথার্থই বলেছেন, ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় বরগুনার ঘটনাটি মানুষ দ্রুত জানতে পেরেছে এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করছে।

আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে এমন ঘটনা আরও অনেক ঘটছে এদেশে। উদাহরণ হিসেবে তিনি জানিয়েছেন একই দিনে রাজশাহীর তানোর বাজারে আম বিক্রি করতে এসে প্রতিপক্ষের আক্রমণে একইভাবে নিহত হয়েছে এক তরুণ।

বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করার নায়ক নয়ন আগে থেকেই সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশের খাতায় এর নাম বারবার যুক্ত হয়েছে। আগেও গ্রেফতার হয়েছিল সে। আট-দশ মামলার আসামি নয়ন।

শেষ মামলায় ১২ লাখ টাকার মাদকসহ গ্রেফতার হয়। আমাদের জানামতে, এসব মামলা জামিন অযোগ্য। ভাবতে অবাক লাগে এমন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী জামিন পেয়ে যথারীতি প্রকাশ্যে খুন খারাবি করে যাচ্ছে।

এসব কারণে সাধারণ মানুষ তো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেই। রিফাত আক্রান্ত হওয়ার সময় কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এদেরও আইনের আওতায় আনার কথা বলেছেন তিনি।

অবশ্য আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হতে পারিনি। খুনির সহযোগী বন্ধু ছাড়াও সাধারণ মানুষদের অনেকে সেদিন এগিয়ে আসেনি রিফাতকে রক্ষা করতে। আমরা মনে করি এর পেছনে যথার্থ কারণও রয়েছে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতা সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার ভয় তৈরি করেছে। সাধারণ মানুষ এখন আর বিবেকের দায়ে সন্ত্রাস মোকাবেলায় সাহসী হতে পারে না। তাদের মধ্যে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, এসব সন্ত্রাসী অনেকেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থাকেন।

পত্রিকার খবরে জানা গেল, ফরাজী উপাধিধারী দুই সন্ত্রাসী ভাই জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সরকার দলীয় সাবেক এমপির আত্মীয়। তার অর্থ এরা চিহ্নিত প্রভাবশালী সন্ত্রাসী। সাধারণ মানুষ জানে এদের সাতখুন মাফ।

গুরুতর অন্যায় করেও পুলিশের দুর্বল রিপোর্টের কারণে অথবা আদালতের ‘সন্তুষ্টি’র জন্য এরা জামিনে মুক্ত হয়ে যায়। সুতরাং কে সাহসী হবে নিজের জীবনের নিরাপত্তা বিপন্ন করে মানবতার ডাকে ছুটে আসতে!

যে দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া সাধারণ গতিতে আইন সক্রিয় হয় না, সেখানে বিপন্ন মানুষের আশার বাতি নির্বাপিত হবেই। তা না হলে মর্মস্পর্শী সাগর-রুনী হত্যা, কুমিল্লার তনু হত্যা, চট্টগ্রামের মিতু হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ না দেয়ায় এসব মামলার ভবিষ্যৎ তলিয়ে যাচ্ছে বঙ্গোপসাগরে।

আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ায় নুসরাত হত্যার রহস্য উন্মোচনে ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সক্রিয় হতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দ্রুততার সঙ্গে চার্জশিট দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু করাতে পেরেছে

 

একইভাবে বরগুনার রিফাত হত্যাকাণ্ডের পর অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেয়ার পর সক্রিয় হয়েছে পুলিশ। মন্ত্রীগণ দমে দমে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। আর জানাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের কথা।

আমাদের বিজ্ঞ মন্ত্রীরা এমন রোমহর্ষক ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দায় এড়াতে চান- বিষয়টি খুব স্বস্তির নয়। নরসিংদীর কলেজছাত্রী ফুলন বর্মণকে পুড়িয়ে হত্যা, রাজশাহীর তানোরের যুবককে হত্যা, সোনারগাঁওয়ে মহিলা ইউপি সদস্যকে খুন করা, একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু এমন অনেক ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনায়’ সয়লাব হচ্ছে পত্রিকার পাতা।

বাস্তবতা বিচারে মানতেই হবে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে কোনো সংকট নেই। তারা রাজনৈতিক প্রভাবকে উপেক্ষা করে স্বাধীন পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। না হলে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে রিফাত খুন হওয়ার পরও স্থানীয় পুলিশ কেন মামলা করার অপেক্ষায় বসে রইল।

রিফাতের পরিবারের সে সময় তো মামলা করার চেয়ে জরুরি ছিল হতভাগ্য রিফাতকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটাছুটি করা। এসব বাস্তবতায় পুলিশ তো অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই বাদী হয়ে আসামি গ্রেফতার করে।

সরকারদলীয় নেতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হওয়ার খুঁটির জোরে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। সব দেখেও কেউ টিকি ছুঁতে পারছে না। একদিকে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে, অন্যদিকে মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী সরকারদলীয় আশ্রয়ে থেকে মূর্তিমান যমদূত হয়ে ওঠে।

১২ লাখ টাকার মাদকসহ ধরা পড়েও আসামি নয়ন আদালত থেকে জামিন নিয়ে বহাল তবিয়তে সন্ত্রাস করে। পুলিশের কাছে চিহ্নিত এবং অতি পরিচিত সন্ত্রাসীরা খুন করে আর পুলিশ মামলার অপেক্ষায় বসে থাকে।

অপরাধ ঘটানোর কয়েক ঘণ্টা পর খুনির বাড়িতে গিয়ে তালাবদ্ধ ঘর দেখতে পায়। ততক্ষণে নিশ্চয় পুলিশকে স্বাগত জানানোর জন্য নয়ন আর তার পরিবার বসে থাকবে না।

এত হৈচৈয়ের পরও এই লেখা প্রস্তুতির সময় পর্যন্ত মূল আসামিরা ধরা পড়েনি (প্রত্যাশা করব লেখাটি প্রকাশের আগে ধরা পড়বে)। বর্তমান দুর্নীতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সময়ে পুলিশ আর দুদকের আসামি ধরা ধরা খেলা দেখে বিরক্ত মানুষ।

সাধারণ মানুষ মনে করে কোনো অঘটনের পর চিহ্নিত-আলোচিত দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতে রাখার কথা এদের। কিন্তু বাস্তবে কি তা ঘটে?

না হলে নুসরাত হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্ট আলোচিত ওসি মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতারে এত টালবাহানা দেখতে হল কেন? বহু আলোচিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেরানি আফজাল দম্পতি শত শত কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে কামিয়ে দুদকের জাল ছিঁড়ে অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গেল কেমন করে?

থানায় কমপক্ষে আটটি মামলা থাকা ও প্রকাশ্যে খুন করা নয়ন গং বরগুনার মাটি কাঁপিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় কেমন করে? আর প্রকাশ্যে এমন খুনের ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়ও বা কেমন করে? এরপরও কি সরকারের সদিচ্ছা, পুলিশের পারঙ্গমতা ও সততা নিয়ে মানুষ প্রশ্ন তুলবে না?

দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এমন যে, এদেশের রাজনৈতিক সরকারই বলি আর বিরোধী দলই বলি, সবাই প্রশংসা শুনতে পছন্দ করে। নিজেদের প্রশংসার যোগ্য করে তোলার চেয়ে বলপ্রয়োগে যেন প্রশংসা পেতে চায়।

বর্তমান বাস্তবতায় বিএনপির মতো বিরোধী দলকে তেমনভাবে গণ্য না করলেও চলে। সরকারের নানামুখী ব্যর্থতার অভিযোগ এনে গৎবাঁধা বক্তৃতা সাধারণ মানুষ তো নয়ই, বিএনপির নিজ কর্মী-সমর্থকদেরও তেমন আকৃষ্ট করে না।

বিএনপির ক্ষমতায় থাকা সময়টা তো মানুষ দেখেছে। তাই চালুনি অন্যের ছিদ্রান্বেষণ করলে তা হাস্যকরই হয়ে ওঠে। কিন্তু বর্তমান সরকার তো মানুষের সামনে ভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে দাঁড়িয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে শেখ হাসিনার সরকার।

রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও এখন অনেক দুর্বল। সরকারের পথচলায় বড় রকমের চ্যালেঞ্জ ছুড়তে তারা পারবে না। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা মতো শক্ত হাতে নিজ দলের জঞ্জাল সাফ করার এখনই সময়।

কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, পুরনো ধারার দলপ্রীতি আর স্বজনপ্রীতি এখনও সক্রিয়। আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের নেতৃত্বের বিশ্বাস করা উচিত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল।

তাই এদেশের মানুষের বড় অংশের বুকের ভেতর এই ঐতিহ্যবাহী দলটির আদর্শের প্রতি সমর্থন রয়েছে। এ কারণে আমরা মনে করি, ক্ষতিকর জঞ্জাল সাফ করে অপেক্ষাকৃত পরিশুদ্ধ মানুষদের কাছে টেনে একটি চমৎকার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়া যায়। ভাবা উচিত পেশিশক্তির চেয়ে আদর্শিক শক্তি অনেক বেশি শক্তিশালী।

বারবার নৃশংস সন্ত্রাস ও খুনখারাবির পেছনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তির প্রশ্রয়ের কথা উঠে আসবে কেন! কেন সব অন্যায়ই সরকারের জিরো টলারেন্সের আওতায় আসবে না।

এই যন্ত্রযুগে মানুষ অনেক বেশি তথ্যসমৃদ্ধ। উন্নয়নের একপিঠের ছবি দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে কিন্তু বুঁদ করে রাখা যাবে না। ভালো খেয়ে-পরে থাকার পাশাপাশি মানুষ নির্ভয়ে ও স্বস্তিতে জীবন নির্বাহ করতে চায়।

গর্বিত বাঙালি হয়ে এদেশে বাস করতে চায়। দমবন্ধ অবস্থায় হতাশা নিয়ে বাঁচতে চায় না।

ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

shahnawaz7b@gmail.com

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --