March 4, 2019
মোদিকে যেভাবে হারিয়ে দিলেন ইমরান খান
আলোরপরশ নিউজ: পাকিস্তান তাদের হাতে আটক ভারতীয় পাইলটকে ছেড়ে দেবার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমবে বলে এখন ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে গত কয়েক দিনের এই সঙ্কটে মানুষ যা দেখল বা বুঝল তাতে জিতল কোন্ পক্ষ? নরেন্দ্র মোদি আর ইমরান খানের মধ্যে কৌশলের লড়াইয়ে জিতলেন কে? গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সংসদে ঘোষণা করেন পাকিস্তান “শান্তির বার্তা” দিতে আটক ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেবে। ইমরান খানের এই ঘোষণার সময় দিল্লিতে বিজ্ঞানীদের একটি সম্মেলনে ভাষণ দিচ্ছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইমরান খানের ওই ঘোষণার কয়েক মুহূর্ত পরেই মোদি পাকিস্তানকে বিদ্রূপ করে মন্তব্য করেন, “পাইলট প্রজেক্ট শেষ হলো” এবং “এখন আমাদের আসল খেলায় নামতে হবে” (পাইলট প্রজেক্ট বলে তিনি পাইলটের ঘটনাকে একধরনের পরীক্ষা বলে ইঙ্গিত করে থাকবেন।) তার সমর্থকরা তার এই বক্তব্যে উল্লাস প্রকাশ করেছে, কিন্তু অনেকেই তার এই মন্তব্যকে রুচিহীন ও উদ্ধত মনে করেছে। মঙ্গলবার ২৬ তারিখে ভারতীয় জঙ্গী বিমান যখন পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢোকে এবং কথিত সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালায়, তখন মোদি বিশাল এক নির্বাচনী জনসভা শুরু করেন এই বলে – “আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যোগ্য নেতৃত্বের হাতে এই দেশ নিরাপদ।” মনে রাখতে হবে ভারতে নির্বাচন হতে যাচ্ছে আর কয়েক মাসের মধ্যে। এর ২৪ ঘন্টা যেতে না যেতেই পাকিস্তান ভারতীয় জঙ্গি বিমানটি গুলি করে ভূপাতিত করে পাকিস্তান প্রশাসিত কাশ্মীরে এবং বিমানের পাইলট আভিনন্দন বর্তমানকে বন্দী করে। ভারতের সাবেক কূটনীতিক এবং কৌশলগত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কে সি সিং বলেন মোদির বিজেপি দলে যারা কট্টরপন্থী এবং ভারতীয় প্রশাসনের “ইমরান খানের কূটনৈতিক রিভার্স সুইং-এর জবাব দেয়া কঠিন হবে।” (ক্রিকেট খেলায় রিভার্স সুইং বল করার কৌশল হলো ব্যাটসম্যানকে বুঝতে না দিয়ে বল আচমকা ব্যাটসম্যানকে লক্ষ্য করে ঘুরিয়ে দেয়া। ইমরান খান তার ক্রিকেট জীবনে বিশ্বের প্রথম সারির একজন খেলোয়াড় ছিলেন।) নিরাপত্তা সঙ্কট ভারতের বড় বিরোধী দলগুলোর মধ্যে অন্তত ২১টি দল মোদির কড়া সমালোচনা করে বলেছে তার শাসনকালে ভারতে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা সঙ্কট যখন চলছে তখন মি: মোদী তার নির্বাচনী জনসভা, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এমনকী মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজিরা দেয়া থামাননি। অনেকেই বলছেন পাকিস্তান দ্রুত পাল্টা হামলা চালিয়ে ভারতের জঙ্গী বিমান ভূপাতিত করে এবং বিমানের পাইলটকে আটক করে মোদিকে কোণঠাসা করে দিয়েছে। পাইলটকে বন্দী করার দুদিনের মধ্যেই ইমরান খান বৈরিতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন, শান্তির কথা বলেছেন এবং পাইলটকে মুক্তি দেবার ঘোষণা দিয়েছেন। কে সি সিং বলছেন বলছেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নিজের “একটা সম্মানজনক ইমেজ তৈরি করেছেন এবং তিনি আলোচনার মাধ্যমে দুপক্ষের বিবাদ মীমাংসার জন্য তৈরি” এমন একটা ভাবমূর্তি তুলে ধরেছেন। ইমরান খানের ভারতীয় পাইলটকে ফিরিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত সবাইকে অবাক করেছে। ইমরান খান তার দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে কথা বলেছেন, তার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং গণমাধ্যমকে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত অবহিত করেছেন। ভারতের অনেক বিশ্লেষক বলছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিজেকে একজন “গ্রহণযোগ্য নেতা” হিসাবে প্রমাণ করেছেন, যিনি ভারতকে কোণঠাসা করার চেষ্টা না করে বৈরিতা বন্ধের একটা পথ প্রস্তাব করেছেন। মোদি মনে হয়েছে পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। ঐতিহাসিক ও লেখক শ্রীনাথ রাঘাবান বলছেন, “আপনি যেভাবেই দেখার চেষ্টা করুন না কেন, পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ভারত হতচকিত হয়ে পড়েছে।” বিবেচনার বিষয়টা হল- ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামার হামলায় ৪০জনের বেশি ভারতীয় আধাসামরিক সেনা নিহত হবার পর ভারত প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় রাতের অন্ধকারে। পাকিস্তান জবাব দেয় দ্রুত এবং সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে পরের দিনই একেবারে প্রকাশ্য দিবালোকে। ‘প্রতিশোধ সঠিক কৌশল নয়’ পাকিস্তানভিত্তিক কথিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠিগুলোর উস্কানি থেকে একটা নিরাপত্তা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া ভারতে নতুন কোন ঘটনা নয়। মোদির আগে অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং মনমোহন সিংকেও একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। যেখানে আক্রমণ চালানোর সামরিক ক্ষমতা থাকলেও হিসাব করে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে যাতে উত্তেজনার পারদ না চড়ে যায়। রাঘাবান বলছেন, “প্রতিশোধ কখনই কৌশলগত লক্ষ্য হতে পারে না। আবেগতাড়িত হয়ে কৌশল ঠিক করলে তা ব্যর্থ হবার বড়ধরনের সম্ভাবা থাকে।” ভারতের গণমাধ্যমগুলোর একটা বড় অংশ ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেবার ঘটনাকে মোদির বিজয় হিসাবে তুলে ধরেছে। খুব কমজনই প্রশ্ন তুলছেন পুলওয়ামার হামলা গোয়েন্দা তথ্যের ব্যাপক ব্যর্থতার কারণে ঘটেছিল কিনা, কিংবা পাকিস্তান প্রকাশ্য দিবালোকে ভারতের প্রতিরক্ষা দুর্গ ভেদ করল কীভাবে? এছাড়াও পাকিস্তানের ভেতর সন্ত্রাসীদের কথিত প্রশিক্ষণ শিবিরে ভারতীয় জেট হামলা চালিয়ে কতটা ক্ষয়ক্ষতি করতে পেরেছে সে চিত্রও এখনও স্পষ্ট নয়। ওই আক্রমণে ঠিক কতজন মারা গেছে সে বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখনও পরিষ্কার করে কিছু জানাতে পারেনি, যদিও গণমাধ্যমের একাংশ খোলাখুলিভাবে প্রায় ৩০০ ‘জঙ্গি’ নিহত হবার খবর দিয়ে গেছে। কাজেই এসব কঠিন প্রশ্ন নিয়ে মোদির ভাবার সময় এসেছে এবং তার বক্তব্য বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে বসেছে কিনা তা নিয়েও তার মাথাব্যথার কারণে তৈরি হয়েছে। যদিও কেউ কেউ বলছেন িইমরান খান হয়ত তার দেশবাসীর কাছে, এমনকী ভারতেও বহু মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণের লড়াইয়ে জিতে গেছেন, কিন্তু ভারতে নিজের ঘাঁটি নিয়ন্ত্রণে মোদি যে পুরো হেরে গেছেন তেমনটা এখনই বলা যাবে না। |
|
সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত |
e-mail: alorparosh@gmail.com- -- |