January 27, 2019
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ৫ হাজার টাকা বেতনে শিক্ষকতা
আলোরপরশ নিউজঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর ডিগ্রি কলেজে অনার্স পর্যায়ে ১৮ জন শিক্ষক আছেন। তাদের বেতন সর্বনিম্ন আট হাজার এবং সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা। অথচ এই ১৮ জন শিক্ষকের বেশির ভাগই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করা। এমনকি তাদের মধ্যে দুইজন রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা। এভাবে রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এই শিক্ষকদের কেউ কেউ। কিন্তু তাদের কেউই এমপিওভুক্তও হতে পারেননি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে পৌর ডিগ্রি কলেজটিকে সবচেয়ে ভালো কলেজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় অবস্থিত গোপীনাথপুর আলহাজ শাহ আলম কলেজে ডিগ্রি শাখা অনুমোদন পায় ২০০৩ সালে। কলেজ সূত্র জানায়, বর্তমানে এখানে তিনটি বিষয়ে অনার্স পড়ানো হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কলেজটির ডিগ্রি শাখায় কোনো শিক্ষককে এমপিও করা হয়নি। ডিগ্রি ও অনার্স শাখায় যারা শিক্ষক রয়েছেন তাদের বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করা। কিন্তু তাদের অনেকে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা সম্মানীতে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা করছেন বছরের পর বছর ধরে। এভাবে সারা দেশের এমপিওভুক্ত বিভিন্ন বেসরকারি কলেজে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করে নামে মাত্র বেতনে শিক্ষকতা করছেন অসংখ্য শিক্ষক। কেউ কেউ রয়েছেন যারা বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে এমপিওকরণ বন্ধ থাকা, এমপিও নীতিমালায় এমপিও প্রদান বিষয়ে সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি কারণে তারা এমপিওভুক্তও হতে পারছেন না। দেশে শিক্ষিত বেকারের করুণ ঠিকানা এমপিওভুক্ত বেসরকারি কলেজ, স্কুল আর নন এমপিওভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করেও কেন এভাবে নামেমাত্র বেতনে বা বিনা বেতনে শিক্ষকতা করছেন জানতে চাইলে অনেকে উত্তর দিতে বিব্রত বোধ করেন। কেউ কেউ জানান, সরকারি চাকরিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে অনেক চাকরির জন্য বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ঘুষ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণসহ নানা কারণে তাদের অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন যোগ্য প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও। অনেকে বারবার ফিরে এসেছেন বিসিএস ভাইবা থেকে। অনেকে অনেক চাকরি পরীক্ষায় লিখিত পরীক্ষায় অনেক ভালো ফল করেও ভাইবা থেকে ফিরে এসেছেন বারবার। কেউ কেউ চাকরির জন্য বারবার ব্যর্থ চেষ্টার কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেক শিক্ষক জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেও কোথাও চাকরি না পেয়ে তারা মারাত্মক পরিচয় সঙ্কটে ভুগতে থাকেন। ফলে বাধ্য হয়ে নামমাত্র বেতনে তারা কলেজে চাকরি নিয়েছেন। বেতন হোক বা না হোক অন্তত বলতে পারছেন কলেজের লেকচারার। এ পরিচয়ের সুবাদে কেউ কেউ বিভিন্ন কোচিং-প্রাইভেটের সাথে যুক্ত হতে পারছেন। অনেকে ভাইবা পরীক্ষার সময় বোর্ডের কাছে অনুরোধ করেন, আমার বেতন দরকার নেই। আমাকে শুধু আপনাদের কলেজে একটি চাকরি দেন। এ অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ। অনেকে জানিয়েছেন, তারা আশায় ছিলেন একদিন এমপিওভুক্ত হবেন। এভাবে আশায় থাকতে থাকতে অনেকের চাকরির বয়সও পার হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেছে। |
|
সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত |
e-mail: alorparosh@gmail.com- -- |