January 5, 2019
দ্য ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদন বাংলাদেশের নির্বাচনে বিশ্বের সমর্থন ও উদ্বেগ
ডেস্ক রিপোট: গত রোববারে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ব্যাপক ও গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করবেন এমন আহ্বানসহ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অভিনন্দন বার্তা আসছে। ওই নির্বাচনে প্রাধান্য বিস্তার করেছে তার জোট। তিনি টানা তৃতীয় মেয়াদে এবং সব মিলিয়ে চতুর্থবার সরকার গঠন করছেন। বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান, প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ তাকে মন্ত্রিপরিষদ গঠনের জন্য আমন্ত্রণ জানানা। এদিনই পার্লামেন্টের নতুন সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করানো হয়, যদিও বিরোধী দলগুলোর নির্বাচিত ৭ জন প্রতিনিধি এ অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। নতুন মন্ত্রিপরিষদ সোমবার শপথ নেয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া শুরুতেই পরিষ্কার নয়। কিন্তু বড় ধরনের বিজয়ের কারণে শেখ হাসিনাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথমে অভিনন্দন জানান। তারপর অভিনন্দন জানায় চীন। এরপরই দ্রুত পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট। এতে বিরোধী দল নেতৃত্বাধীন জোট পায় মাত্র ৭টি ভোট। সৌদি আরব, রাশিয়া, কাতার, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভুটান ও পাকিস্তান অভিনন্দন জানিয়েছে শেখ হাসিনাকে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তারা নতুন সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে চায়। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর ভারত, চীন, রাশিয়া ও সৌদি আরবের সঙ্গে হাসিনা কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা শুরু করেন। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় ফেরার পরও তিনি এই ধারা অব্যাহত রাখেন। সন্ত্রাস বিরোধী সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ৩৪ জাতির ইসলামিক মিলিটারি কোয়ালিশনে যোগ দেয় বাংলাদেশ। এ ছাড়া দেশটি রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে নির্মাণ করছে তাদের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। চীন থেকে দুটি সাবমেরিন কিনেছেন শেখ হাসিনা। বিশেষ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ অবকাঠামো খাতে বিবিনয়োগ করতে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জাপানকে। চীনের নেতৃত্বাধীন এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকটার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি)-এর একটি সদস্য দেশ বাংলাদেশ। এ ব্যাংটিকে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়। বাংলাদেশ সাধারণত তার সামরিক অস্ত্রশস্ত্র কিনে থাকে চীনের কাছ থেকে। বাণিজ্যের বাইরেও পশ্চিমাদের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্য খাতে সম্পর্ক আছে। হুমায়ুন কবির বলেন, গণতন্ত্রে মূল্যবোধে আমরা বিশ্বাসী। তাই আমরা তাদের সঙ্গে মূল্যবোধের ভিত্তিতে সম্পর্কযুক্ত। রোববারের নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র একটি বিবৃতি দিয়েছে। এতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্টে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও গণতান্ত্রিক উন্নয়নে গভীরভাবে নিজেদের যুক্ত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। হুমায়ুন কবির বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিক দিয়ে বাংলাদেশের চমৎকার কাহিনী রয়েছে। তিনি নির্বাচনে যেভাবে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছেন তা বলে দেয় যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভোটারদের রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে। এই কাহিনীই এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে অনুরণন তুলছে। আর এ জন্যই এত বেশি সংখ্যক দেশ প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনে অসাধারণ বিজয়ের কারণে অভিনন্দন জানাচ্ছে। হুমায়ুন কবির বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল দেশ হিসেবে দেখতে চায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদেরকে আরো বেশি প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে। আমাদের শ্রম খাতে আরো বেশি সংস্কার প্রয়োজন। আমাদের অবকাঠামোকে আরো উন্নত করতে হবে। আমাদের রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ককে আরো আধুনিকায়ন করতে হবে। কারণ, আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা সব সময় এসব ইস্যুর দিকে তাকান। তাই তারা এখন বাংলাদেশের দিকে তাকাচ্ছেন একটি ইতিবাচক দিক থেকে। রোববারের নির্বাচন সংক্রান্ত সহিংসতায় এক ডজনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারণা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে বিরোধীদের গ্রেপ্তার ও কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে জেলে দেওয়ার মাধ্যমে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলেন শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার কারণে। তবে তার সমর্থকরা বলেন, এ অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নির্বাচন নিয়ে অনিয়মের বিষয় এড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগ আছে নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য বিভাগের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের আগে একটি নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর করা হয়, যাতে মুক্ত মত ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে খর্ব হয়েছে বলে জোরালো অভিযোগ ওঠে। এমন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে শারীরিক হামলা, অশোভন আচরণ, ইচ্ছেমতো গ্রেপ্তার, হয়রানি, গুম এবং ফৌজদারি মামলা করার মতো ঘটনা রয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া গেছে যে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় সহ বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর সহিংস আক্রমণ করছে। ভীতি প্রদর্শন করছে। বৈষম্যহীনভাবে তা করা হচ্ছে। এসব ঘটনায় আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা মাঝে মাঝে জড়িত। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিরোধী দলগুলো বিখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি জোট গঠন করেছে। ড. কামাল হোসেন শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগে তার পিতা বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। ড. কামালের ছোট্ট দল গণফোরামের তেমন জনপ্রিয় সমর্থন নেই। অন্যদিকে হাসিনা ও খালেদা জিয়ার রয়েছে ব্যাপক সমর্থন। তাদের র্যালিতে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা যে বিরোধী দলকে দেখছেন, তারা কারা? প্রধান দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সাবেক সামরিক স্বৈরশাসক, যিনি দেশে সামরিক আইন জারি করেছিলেন। তখন জনগণের কোনো সাংবিধানিক অধিকার ছিল না। |
|
সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত |
e-mail: alorparosh@gmail.com- -- |