November 19, 2018
আগামীর প্রযুক্তি রিমোট বাদ, মস্তিষ্কই চালাবে টিভি!

কেমন হয়, যদি শুধু ভাবলেই টিভির চ্যানেল পরিবর্তন হয় বা আওয়াজ বেড়ে যায়? প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাং এমন স্বপ্নই দেখাচ্ছে। তারা এমন এক ধরনের টিভি ব্যবস্থা তৈরি করছে, যার জন্য রিমোট বা দূরনিয়ন্ত্রক যন্ত্র লাগবে না, মস্তিষ্কই করবে টিভির নিয়ন্ত্রণ! সুইজারল্যান্ডের ইকোল পলিটেকনিক ফেডারেল ডি লোজেনের (ইপিএফএল) সঙ্গে মিলে পনথিয়াস প্রকল্পের আওতায় প্রতিষ্ঠানটি গুরুতর শারীরিক অক্ষমতাসম্পন্ন মানুষদের অন্য কারও সাহায্য ছাড়াই তাদের পছন্দের অনুষ্ঠান উপভোগের সুযোগ দিতে চাইছে।

 কেন এবং কীভাবে কাজ করবে?

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রানসিসকো শহরে নির্মাতাদের সম্মেলনে এই টিভি ব্যবস্থার একটা নমুনা দেখানো হয়। সেখানে এইপিএফএলের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী রিকার্ডো শ্যাভেরিয়াগা জানান, যাঁরা নড়তে পারেন না অথবা খুব কষ্টে নড়তে পারেন, তাঁদের প্রযুক্তির স্বাদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন তাঁরা। এই প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কের সঙ্গে টিভির সংযোগ স্থাপন করতে একটি ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) ব্যবহার করা হবে, যাতে ৬৪টি সেন্সরযুক্ত একটি হেডসেট এবং চোখের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য থাকছে একটি আই-মোশন ট্র্যাকার। ছবি দেখার ইচ্ছা হলে মানুষের মস্তিষ্ক কেমন আচরণ করে, তা নির্ণয় করতে বিজ্ঞানীরা এখন মস্তিষ্কের তরঙ্গের (ব্রেইনওয়েভ) স্যাম্পল নিচ্ছেন। এর থেকেই একদিন হয়তো সিস্টেমটা ব্রেইনওয়েভ পর্যালোচনা করে জানতে পারবে ব্যবহারকারী আসলে কী করতে চাইছে এবং চোখের গতিবিধি দেখে তা যাচাইও করে নিতে পারবে।

 কবে নাগাদ বাজারে আসবে?

পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও শারীরিকভাবে অক্ষমদের জন্য খুব উপকারী হলেও, শিগগিরই এটা সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে না। পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর্যায়ে আছে এখনো। সেন্সরযুক্ত হেলমেট মাথায় পরার আগে মাথায় জেল মাখিয়ে নিতে হয় এখন। এর চেয়ে নিশ্চয়ই রিমোটটা খুঁজে বের করা বা হাতের কাছে রাখাটাই উত্তম, তাই না? স্যামসাং এবং ইপিএফএল এ ছাড়াও আরও একটি ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে, যা সফল হলে মস্তিষ্ক এবং টিভি কোনো বাধা ছাড়াই শুধু ব্রেইনওয়েভের মাধ্যমে সরাসরি নিজেদের মধ্যে ভাববিনিময় করতে পারবে। বিশেষ করে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্যারাপ্লেগিয়া রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই ব্যবস্থা খুবই উপকারী হতে পারে। পাশাপাশি অন্য কিছু প্রতিষ্ঠানও বিসিআই নিয়ে কাজ করছে, যা হয়তো একদিন মানুষকে যন্ত্রের সঙ্গে সরাসরি ভাববিনিময়ের ক্ষমতা দেবে। এলন মাস্কের ‘নিউরালিংক’–এর কথাই বলা যায়, যা মানুষ এবং কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে আল্ট্রাহাই ব্যান্ডউইথের মস্তিষ্ক-যন্ত্র যোগাযোগের কৌশল ব্যবহার করে।

 মনকে কম্পিউটারে আপলোড করে সংরক্ষণ সম্ভব কবে?

মস্তিষ্ক এবং স্মৃতি ধরে রাখার বিষয়টাকে ‘ট্রান্সহিউম্যানিজম’ ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানীদের সাহায্যে মানবদেহকে তার বর্তমান রূপ থেকে অন্য রূপেও নেওয়া সম্ভব—এমন বিশ্বাসই ট্রান্সহিউম্যানিজম। মনের ভাবনাগুলোকে সরাসরি কম্পিউটারে আপলোড করার ধারণাটা যাঁরা ছড়িয়ে দিয়েছেন, গুগলের প্রকৌশল শাখার পরিচালক রে কার্জেইল তাঁদের অন্যতম, যিনি বিশ্বাস করেন ২০৪৫ সালের মধ্যে মানুষ তার সমগ্র মস্তিষ্ককেই কম্পিউটারে আপলোড করে ফেলতে সক্ষম হবে। ঠিক যেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মতো! এমনকি ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৃত্যুর পরও ভালোবাসার মানুষটির ব্যক্তিত্ব এবং স্মৃতিগুলোকেও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন প্রথিতযশা ভবিষ্যৎবাদী ড. কাকু। তিনি বলেন, ‘ভাবুন তো, আপনার ভালোবাসার মানুষটির মৃত্যুর পরও আপনি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারছেন…এটা সম্ভব, যদি তাঁর ব্যক্তিত্বকে একটা কম্পিউটারে ধারণ করে রাখা যায়, ঠিক অ্যাভাটারের মতো করে!’

 সমালোচকেরা যা বলছেন

এই ধারণাগুলো নিয়ে সমালোচনাও কিন্তু কম হচ্ছে না। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী হেনড্রিকস এমআইটিকে বলেছেন, এই প্রযুক্তিগুলো ঠাট্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। স্নায়ুবিজ্ঞানী মিগুয়েল নিকোলেলিস মনে করেন এমন প্রযুক্তি বাস্তবে তৈরি করা অসম্ভব। তিনি স্রেফ জানিয়ে দেন, ‘মস্তিষ্ক গণনার যোগ্য নয় এবং কোনো প্রকৌশলই এটাকে পুনরুৎপাদন করতে পারবে না। দুনিয়ার সব কম্পিউটার দিয়েও তুমি চেতনা সৃষ্টি করতে পারবে না।’

 সূত্র: ডেইলি মেইল

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --