October 2, 2018
আরজেএসসির উদাসীনতায় ৭৬ কোটি টাকার রাজস্ব হাতছাড়া

আলোরপরশ নিউজঃ

প্রচলিত নিয়মানুযায়ী নতুন কোম্পানি গঠন করতে হলে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতরের (আরজেএসসি) নিবন্ধন নিতে হয়।

এক্ষেত্রে সেবাগ্রহীতাদের নির্দিষ্ট অঙ্কের ফি দিতে হয়। এ ফির সঙ্গে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) আদায়ের নিয়ম রয়েছে।

কিন্তু আরজেএসসি ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত মোট চার বছর এসব খাতে কোনো ভ্যাট আদায় করেনি। ফলে ওই সময়ে এ খাতে সরকারের ৭৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

সূত্র জানায়, ভ্যাট আইন অনুযায়ী কোনো সেবার বিপরীতে ভ্যাট আরোপিত হলে তা সংশ্লিষ্ট সংস্থা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেবে। কোনো কারণে তারা ভ্যাট আদায় না করলে ভ্যাটের সমপরিমাণ অর্থ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে।

এ আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আরজেএসসির কাছে একাধিক চিঠি দিয়ে ওই ভ্যাট পরিশোধের তাগাদা দিয়েছে। কিন্তু তারা তা পরিশোধ করেনি।

এদিকে ভ্যাট পরিশোধ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ফির বিপরীতে আরজেএসসি ভ্যাট আদায় করেনি। সেহেতু দাবিকৃত ৭৬ কোটি টাকা ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ নেই। তবে ভবিষ্যতে আদায় করা ফির বিপরীতে ভ্যাট আদায় করে তা এনবিআরকে দেয়া হবে।

অন্যদিকে এনবিআর বলছে, আইন অনুযায়ী আরজেএসসির ভ্যাট আদায়ের বাধ্যবাধকতা আছে। তাই আরজেএসসিকে বকেয়াসহ সব ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার কাজী মোস্তাফিজুর রহমান  আরজেএসসির বকেয়া ভ্যাট মওকুফের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এনবিআরকে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু এনবিআর আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। এখন এনবিআরের চিঠি পেলে ভ্যাট আদায়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরজেএসসির ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, প্রাইভেট ও পাবলিক কোম্পানি নিবন্ধন, সোসাইটি নিবন্ধন, পার্টনারশিপ ফার্ম, ট্রেড অর্গানাইজেশন থেকে নাম ক্লিয়ারেন্স ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি, রিটার্ন ফাইলিং ফি, সার্টিফায়েড কপি ইস্যু ফি, এনওসির সময় এক্সটেনশন ফি, ওয়ান্ডিং ফি ও সাধারণ আবেদন ফি বাবদ অর্থ আদায় করে। ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২ লাখ ১৬ হাজার ৬২৩টি প্রতিষ্ঠান আরজেএসসির নিবন্ধন দিয়েছে।

দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে নিবন্ধন ফির বিপরীতে ভ্যাট আদায়ে বিধান করা হয়। কিন্তু আরজেএসসি ফির বিপরীতে ভ্যাট আদায় করত না। এ কারণেই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।

একাধিকবার তাদের তাগাদা দেয়া হলেও ভ্যাট আদায় করেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারির পর থেকে তারা ভ্যাট আদায় শুরু করে। যেহেতু সংস্থাটিকে তাগাদা দিয়েও ভ্যাট আদায় করানো যায়নি, তাই সংস্থাটির কারণেই সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।

এখন আইন অনুযায়ী তাদেরই ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। দাবিনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে গত অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত চার বছরে ৫০৮ কোটি ১৪ লাখ টাকার সেবার বিপরীতে ৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকার ভ্যাট দাবি করা হয়।

এর মধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকার সেবার বিপরীতে ১৬ কোটি ৩৪ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৫২ কোটি ৭২ লাখ টাকার সেবার বিপরীতে ২২ কোটি ৯ লাখ, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২১২ কোটি ৭ লাখ টাকার সেবার বিপরীতে ৩১ কোটি ৮১ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ৩৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকার সেবার বিপরীতে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার ভ্যাট বকেয়া রয়েছে। মোট ৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা বকেয়ার বিপরীতে ৩০ কোটি টাকা সুদসহ মোট ১০৬ কোটি টাকা পরিশোধে দাবিনামা জারি করা হয়েছে।

126Shares
More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --