September 30, 2018
এশিয়া কাপের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি

আলোরপরশ নিউজঃ

অধিনায়ক হলেও তার মধ্যে নেই কোনো দামিম্ভকতা। মাঠে এবং মাঠের বাইরে সবাইকে এক সুতোয় গেঁথে রাখতে চান তিনি। তাই এই অধিনায়ক সবার কাছে ভাই নয়তো বন্ধু। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কথা। মাঠে তার উপস্থিতিই যথেষ্ট সতীর্থদের উজ্জীবিত রাখতে। সদ্যই শেষ হয়েছে এশিয়া কাপের ১৪তম আসর। ফাইনালে হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু হৃদয় উজার করে খেলেছে মাশরাফি বাহিনী। এর কৃতিত্ব অধিনায়কের। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন এবং দল তার উপর চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেন। কারণ তিনি যে সেরা। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে তা এবার বর্হিবিশ্বেও প্রমাণিত হলো। হ্যাঁ, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের এবারের আসরের সেরা অধিনায়ক বলা হচ্ছে মাশরাফি মতুর্জাকে।

প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের সাথেও তার আচরণ বন্ধুসুলভ

 

পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজা দীর্ঘদিন ধরেই ক্রিকেটের ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করছেন। তিনিই বাংলাদেশ অধিনায়ককে ‘সেরা’র তকমা দিয়েছেন। রমিজ বলেছেন, ‘আমার চোখে ক্যাপ্টেন অফ এশিয়া কাপ হচ্ছে মাশরাফি বিন মতুর্জা।’

কিন্তু এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন দল তো ভারত। সে হিসেবে সেরা অধিনায়ক তো রোহিত শর্মারই হওয়ার কথা। তাহলে তিনি কেন নন?

মাশরাফির ফ্লাইং ক্যাচ

 

রোহিত ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন ঠিকই। কিন্তু মাঠে তিনি সরব নন, যেমনটা মাশরাফি। প্রতি বলে তিনি বোলারকে উজ্জীবিত রাখতে সচেষ্ট থাকেন। এমনকি ফিল্ডিংয়ের সময়ও। প্রতি রানের ব্যাপারে সজাগ।

এছাড়া দলে অভিজ্ঞ দুই খেলোয়াড় তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান না থাকলেও মাশরাফির নেতৃত্ব সে অভাব পূরণ করেছে। পরিস্থিতি বুঝে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওভারে দুর্দান্ত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ইনজুরি আক্রান্ত দল নিয়েও ফাইনাল পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন এই ওয়ার্ল্ড ক্লাস অধিনায়ক।

অপরদিকে রোহিত মাঠে শান্ত থাকেন, যেটি তিনি নিজেও বলে থাকেন। অনেকটাই ধোনির মতো।

তবে রোহিতকে ছেড়ে মাশরাফিকে সেরার বলার ব্যাখ্যা দিয়েছেন রামিজ। বলছেন, ‘মাশরাফির হাতে ছিল না তামিম ইকবাল। ছিল না সাকিব আল হাসান। এই রানের পরেও শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন। ভারতের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।’

 

এই সব দিক বিচার বিবেচনা করে মাশরাফিকেই সেরা অধিনায়ক বেছে নিয়েছেন রমিজ।

 

আরো পড়ুন : দেশে ফিরে যা বললেন মাশরাফি

এশিয়া কাপের সফর শেষে শনিবার রাত ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান মাশরাফিরা। বিমানবন্দরে টাইগারদেরকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয় টাইগারদের।

ঢাকায় এসে সাংবাদিকদের সামনে সতীর্থদের প্রশংসা করেছেন টাইগার ক্যাপ্টেন। এর আগেও পাঁচবার ফাইনালে হেরেছে বাংলাদেশ। কিন্তু তখন যেভাবে ভেঙে পড়েছে ছেলেরা তার থেকে এখন অনেক শক্ত হয়েছে। এই দিকটাকে ভালো দিক বলে মানছেন অধিনায়ক।

মাশরাফি বলেন, ‘অন্যবারের তুলনায় এবার ক্রিকেটারদের অনেক শক্ত দেখেছি। এটা খুব ভালো দিক। আমাদের সবাই শেষ পর্যন্ত লড়েছে। লিমেটেডে থেকেও জেতার ইচ্ছেটা ছিল। আমি কেন, ওদের নিজেদেরও এটা নিয়ে গর্ববোধ করা উচিত। সবাই উপলব্ধি করেছে কে কোথায় কী করতে পারত। এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ক্রিকেট এগিয়ে যাবে, সামনে বড় বড় টুর্নামেন্ট আছে। সামনে বিশ্বকাপ আছে। বড় দুই-তিনটা সিরিজ আছে। চেষ্টা করব, এই ভুল সামনে যেন না হয়।’

ফাইনালে সাকিব-তামিম ছিলেন না। তারা থাকলে কী হত এ ব্যাপারে মাশরাফি বলেন, ‘বলা খুব কঠিন। এর আগে ওরা থাকার পরও জিততে পারিনি। ওরা না থাকার পরও এবার যেভাবে লড়েছি, এটা অনেক বড় ব্যাপার। সামনে ওরা যোগ হলে চিত্রটা অন্য রকম হতে পারে।

এশিয়া কাপে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানে হারিয়ে দুর্দান্তভাবে শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তানের সাথে হেরে যায় মাশরাফি বাহিনী। সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে ভারতের সাথে হারে বাংলাদেশ। এরপর আফগানিস্তান ও চলতি এশিয়া কাপের অন্যতম ফেবারিট পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। ফাইনালে শেষ বলে হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে লিটন দাসের সেঞ্চুরি ও তার বিপক্ষে বিতর্কিত আউট দেয়া নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

 

আরো পড়ুন : মাশরাফির বার্তা পেয়েই সেঞ্চুরির দিকে এগুতে থাকেন লিটন

এশিয়া কাপ ফাইনালে কাল ঝলসে উঠেছিল লিটন দাসের ব্যাট। ১১৭ বলে ১২১ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলে বিদায় নিতে হয় এই ওপেনারকে। শেষ পর্যন্ত লিটন দাস যদি ক্রিজে থাকতেন তাহলে বাংলাদেশের ইনিংসটি কাল আরো বড় হতো।

শুক্রবার ৩৩ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন লিটন। তিনি পঞ্চাশ করার পরেই অধিনায়ক মাশরাফি মতুর্জাকে দেখা যায় ড্রেসিং রুম থেকে তার দিকে ইশারা করতে।

কী বলতে চেয়েছিলেন মাশরাফি?

খুব স্পষ্ট ছিল অধিনায়কের ইশারা। তিনি লিটনকে বোঝাতে চাইছিলেন, পঞ্চাশ করে ফেলেছ। আরো বেশি সময় ক্রিজে কাটাও। পঞ্চাশকে আরো বড় স্কোরে পরিণত কর।

মাশরাফির ইশারায় কাজ হয়। লিটন হাফসেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘বিতর্কিত’ রান আউটে বিদায় নিতে হলো লিটন দাসকে।

৪০তম ওভারের শেষ বলে কুলদীপ যাদবের বলের স্ট্যাম্পড হন লিটন। টিভিতে দেখা যায়, ধোনি যখন বলটি স্ট্যাম্পে লাগান তখন লিটনের পা দাগে আছে। তারপরও অস্ট্রেলিয়ান টিভি আম্পায়ার রড টাকার লিটন দাসকে আউট ঘোষণা দেন।

ঘরোয়া ক্রিকেটে হার্ডহিটার ব্যাটসম্যান হিসেবে খ্যাতি থাকলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো ভাবেই নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না লিটন দাস। এশিয়া কাপের ফাইনালের আগে ১৭টি ওয়ানডেতে তার কোনো হাফসেঞ্চুরিও ছিল না। কালই ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি।

(২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, প্রকাশিত সংবাদ)

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --