August 3, 2018
জলাবদ্ধতার কবলে সাতক্ষীরা#খননের নামে হাজার কোটি টাকা লোপাট
২৭টি নদীর ১৩ টি পলিপড়ে ভরাট# অস্তিত্ব হারিয়েছে ৪২৯টি খাল# ২১৬টি স্লুইস গেটের বেশিরভাগ অকেজো# পাঁচ শতাধীক মৎস্য ঘের পানির তলে# পানিতে ভাসছে কৃষণের স্বপ্ন আমনের বীজতলা# আলোরপরশ, সাতক্ষীরা থেকে: নদীর নাব্যতা হ্রাস, পলিপড়ে তলদেশ ভরাট, অকেজো স্লুইস গেট ও খননের নামে চরম দুর্ণিতীর কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে সাতক্ষীরার নিন্ম অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা শহরের নিন্মাঞ্চল জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আশাশুনিতে শতাধীক মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। বেশিরভাগ রাস্তা ঘাট পানির নিচে। কয়েকটি ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কালিগঞ্জ, শ্যামনগর ও তালাতে ব্যাপক ফসলি জমি,আমন বীজতলা,পানের বরজ,মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। নিন্ম অঞ্চলের আমনের ক্ষেত পানির নিচে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চচলের চাষীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। পানিউন্নয়ন বোর্ড বলছে জেলার ১৪টি নদী কোন রকমে টিকে আছে। এসব নদীর শাখা প্রশাখায় প্রবাহিত রয়েছে ৪২৯ টি খাল। পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাবে যার বেশির খাল এখন অস্তিত্ব হারিয়েছে। অনেক জায়গায় নদী ও খালের বুকে জেগে উঠা চরে মানুষ বসতি শুরু করেছে। ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দর্শকে এসব খালের উপর নির্মিত ২১৬টি স্লুইস গেটের মেয়াদ প্রায় শেষ। সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগে ২১৬টি স্লুইস গেট রয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর অধীনে ১২৩টি স্লইস গেট রয়েছে। যার ৮০টি কার্যক্ষম আছে বাকি ৩৪ টি সম্পূর্ণ অকেজো। এছাড়া সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর অধীনে ৯৩ টি স্লইস গেটের মধ্যে ২৮টি সম্পূর্ণ অকেজো। ৫০টির তলদেশ পলি জমে উঁচু হয়ে যাওয়ায় এগুলো পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। পাউবো-১ এর একটি তথ্যে দেখা যায় ১২৩টি স্লুইস গেটেরে মধ্যে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সালে নির্মিত ৩৫টি,১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ সালে নির্মিত ৫টি,১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সালে নির্মিত ৩০টি, ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৬ সালে নির্মিত ৪৮টি এবং ১৯৮৯ থেকে ৯৩ সালে নির্মিত ৫টি। যার বেশির ভাগ স্লুইস গেটের মেয়াদই শেষ। জলবায়ু প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সালের ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতটি প্যাকেজের মাধ্যমে কলারোয়ার মুরারীকাটি থেকে সদরের সুপারীঘাটার দিকে ২৫ কিলোমিটার নদী খননের জন্য যে ব্যয় করা হয় তা মেনি কাজে আসেনি। ২৫ কোটি টাকার খনন করা হয়েছে সাতক্ষীরার এক সময়ের প্রমত্তা বেতনা নদী । কিন্তু খননের পূর্বের অবস্থার চেয়ে বর্তমান অবস্থা আরো খারাপ। খনন কাজের পূর্বে নদীটি কমপক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ মিটার চওড়া ছিল। কিন্তু খননের পর নদীটি পরিণ ত হয়েছে নালায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, যাচ্ছে তাই ভাবে নদীটি খনন করায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। বেতনা নদীর মাঝ বরাবর খনন করার কথা ছিল ১০ থেকে ১৮ ফুট। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই হয়নি। কেবল বিনেরপোতা ব্রিজের কাছে দুই থেকে তিন ফুট গভীর করে খোঁড়া হয়েছে। কোথাও এক ফুটের বেশি মাটি তোলা হয়নি। উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নে সাতক্ষীরার বেতনা নদী খনন ও পাড় বাঁধাই করার জন্য ২৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল সরকার। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ২৫ কোটি টাকার ওই প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করে টাকা তোলার অভিযোগ আছে ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরায় বেতনা ছাড়াও মরিচ্চাপ নদী অদক্ষ পরিকল্পনার বলি হয়েছে । এক সময়ের স্রোতহীন নদী এখন মরা নালা। এছাড়া যমুনা, শালতা, শালিখা, সাপমারাসহ বিভিন্ন নদী-খালের অবস্থাও একই। ডাঙ্গা, কোঁড়া, পাঁচপোতা, নারকেলী, দেবহাটা, বসন্তপুর, সুশিলগাতী, নওয়াপাড়া, নাংলাসহ আশপাশের এলাকাগুলোর খাল-বিলে এবং সড়কগুলো পানি জমে থাকায় জনভোগান্তির পাশাপাশি ব্যপক ক্ষয়-ক্ষতির অশংঙ্কা বিরাজ করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে নাজুক অবস্থা। অনেক প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় পাঠ বন্ধ করে দিয়েছে। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড- ১ ও ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীরা জানান, নদী খনন ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ১১শ ৩৬ কোটি টাকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কাগজপত্র(ডিপিবি) পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নদীর তীর সংস্কারের জন্য ১৬শ ৪৫ কোটি টাকা এবং জাইকার কাছে ৯০ কোটি টাকা চয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কাগজপত্র(ডিপিবি) পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ পেলে কাজ শুরু হবে। |
|
সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত |
e-mail: alorparosh@gmail.com- -- |