July 26, 2018
জনবল সংকট ও রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে সাতক্ষীরা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে কার্যক্রম চ্যালেঞ্জের মুখে

অালোরপরশ নিউজঃ:  সাতক্ষীরাঃ খাদ্যের অপ্রতুলতা, রোগের প্রাদুর্ভাব, সুষ্ঠু সংরক্ষণ, বিপণন ও সীমিত জনবলের কারণে সাতক্ষীরা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে উন্নয়ন কার্যক্রম চ্যালেঞ্জের মুখে। চাহিদার তুলনায় জেলাতে দুধ, ডিম ও মাংসের উৎপাদন কম। মাংস উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্জন করলেও সাতক্ষীরা রয়েছে অনেক পিছিছে। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে ৮৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছে ৫৭ জন। ফলে ২৮টি শুন্য পদে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাঁধার সম্মুখিন হচ্ছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরটি। যদিও একজন ব্যক্তির প্রাণিজ আমিষের দৈনিক চাহিদার ৭৬ ভাগই এ বিভাগ সরবরাহ করে আসছে। কৃষি নির্ভর জেলাটির আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় প্রাণিজ সম্পদ দপ্তরটির গতি ফিরিয়ে আনা দরকার বলে মনে করছেন এখাতে সংশ্লিষ্টরা।
প্রাণি সম্পদ দপ্তরটির মতে দেশের মোট জন সংখ্যার ২০ ভাগ প্রত্যক্ষ এবং ৫০ ভাগ পরোক্ষ ভাবে প্রাণিজসম্পদ খাতের উপর নির্ভরশীল। সেই হিসাবে জেলার প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে প্রাণিজসম্পদ খাতের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোতে বেশির ভাগ বাড়িতে গবাধি পশু পালন করে আসছে। এছাড়া,হাস,মুরগী বিভিন্ন জাতের পাখি পাপলন করছে তারা। অনেকে বিভিন্ন ঋণদান সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে পশু ও পাখি পালন করে আসছে। কিন্তুপ্রতি বছর খাদ্যের অপ্রতুলতা, রোগের প্রাদুর্ভাব, সুষ্ঠু সংরক্ষণ, বিপণনের কারণে অসংখ্য প্রাণী মারা যাচ্ছে। ফলে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে জেলা বাসি।
গত তিন বছরে দেশে প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বেড়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৭ অনুযায়ী বর্তমানে মাংস, দুধ ও ডিমের জন প্রতি প্রতিদিনের প্রাপ্যতা মাংস ১২১.৭৪ গ্রাম এবং দুধ ১৫৭.৯৭ মি.লি। বছরে ডিমের প্রাপ্যতা রয়েছে জনপ্রতি ৯২.৭৫টি। যদিও এর আগের বছর ডিমের প্রাপ্যতা ছিল জনপ্রতি ১০৪টি।
প্রাপ্যের তুলনায় জেলাতে ব্যাপক খাটতি রয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মতে, জেলাতে দুধের চাহিদা রয়েছে ১.৮২৫ লক্ষ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হয় ০.৯১০ লক্ষ মেট্রিক টন। এর পরও জেলার চাহিদা মিটিয়ে দুধ অন্য জেলাতে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া দুগ্ধ জাত পণ্য গুড়া দুধ ও তরল দুধ প্যাকেট করে বাজারজাত করা হয়। ঘাটতির পরও কিভাবে দুধ জেলার দুধ অন্য জেলাতে পাঠানো হয় জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্রদাশ জানান, সাতক্ষীরার মানুষ তুলনা মুলক দারিদ্র। ৫ সদস্যের একটি পরিবারের জন্য তারা ২শ থেকে ২শ ৫০ গ্রাম দুধ যথেষ্ট মনে করে। এছাড়া অনেক পরিবা দৈনিক দুধ ব্যবহার করে না। ফলে জেলাতে উৎপাদিত দুধ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে পাঠানো হয়।
জেলাতে ডিমের চাহিদা রয়েছে ২০.৮০ কোটি। জেলাতে উৎপাদিত ডিমের পরিমাণ ১৭.২০ কোটি । যেখানে ঘাটতি থাকে প্রতিবছর ৩.৬০ কোটি। জেলাতে মাংসের চাহিদা রয়েছে ০.৮৭৬ লক্ষ মেট্রিক টন। আর সরবরাহ রয়েছে ০.৫৭৫ লক্ষ মেট্রিক টন। ফলে প্রতিবছর ঘাটতি থাকে ০.৩০১ লক্ষ মেট্রিক টন। জেলা প্রাণিজসম্পদ কর্মকর্তার দাবী বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার রির্পোট অনুযায়ী জেলার মানুষ প্রাপ্যতা অনুযায়ী মাংস ও ডিম খাই না । তাই মাংস ও ডিমে ও জেলাতে ঘাটতি থাকে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের মতে বর্তমানে জেলাতে ৪ লক্ষ ৮৬ হাজার ১১২টি পশু, ৫৮৪৩টি মহিষ,৩ লক্ষ ১৫ হাজার ৮১৯টি ছাগল,৩৮ হাজার ৪১২টি ভেড়া,৪৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ১৮৮টি মুরগী ও ৪ লক্ষ ৬৩ হাজার ২৪টি হাস রয়েছে । সূত্র মতে জেলাতে রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত দুগ্ধ খামার ২০৮৬ টি ও অরেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত দুগ্ধ খামার ৩৪৫টি এবং মুরগী ও গাভীর খামার রয়েছে ১২ হাজার ৫১৬টি। ছাগলের রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত খামার রয়েছে ১৮৬টি ও ভেড়ার ৭৩টি।
ব্রয়লার মুরগীর রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত খামার রয়েছে ২১৭৯টি ও লেয়ার মুরগীর রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত খামার রয়েছে ২৬৮৭টি। তবে বেসরকারী ডিহসাব মতে এর সংখ্যা অনেক বেশি।
জেলাতে গবাধি পশু চিকিৎসার প্রায় ২-৫ ভাগ ওষুধ সরকারী ভাবেসরবরাহ করা হয় বলে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানায়। চলতি বছরে ২ লক্ষ ৯২ হাজার ১৩ মাত্রা গবাধি প্রাণির টিকা প্রদান করা হয়েছে। হাস মুরগীর টিকা প্রদান করা হয়েছে ৩৮ লক্ষ ৯৮ হাজার মাদ্রায়। এক লক্ষ ৪০ হাজার গবাধি প্রাণীর চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। ৭৭ লক্ষ ৪৯৪টি হাস-মুরগীর চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এসব ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা দেয়ার নামে রয়েছে ব্যাপক অনিয়ন ও দুর্ণিতীর অভিযোগ।
এরপরও চলতি বছরে ২৯৩ টি উঠান বৈঠক করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর। ফলে বছরের বেশির ভাগ সময়ে কর্মব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। প্রথম শ্রেণীর ১৬ কর্মকর্তার মধ্যে ৯টি পদই রয়েছে শূন্য। তৃতীয় পদে রয়েছে ৯টি ও চতুর্থ শ্রেণী পদে ২০টি পদেও ১০টিই শূন্য। ৭৮টি ইউনিয়নের ২১ জন ফিল্ড অফিসার কর্মরত। ফলে ৩ থেকে ৪টি করে ইউনিয়ন একজন করে ফিল্ড অফিসার । শ্যামনগর ও কলারোয়াতে প্রথম শ্রেনীর কোন কর্মকতৃা নেই। যদিও প্রত্যেক উপজেলাতে একজন করে প্রথম শ্রেণীর চিকিৎসাবিদ ও একজন কৃষিবিদ থাকার কথা। এসব কারণে জেলাতে খাতটি অবহেলিত রয়েছে। চাষীদের মাঝে ক্ষুদ্র ঋণ ও বন্ধ রয়েছে। এর পরিবর্তে সরকার ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প চালু করেছে। আগামি ২০২১ সালের পর থেকে প্রকল্পটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সমরেশ চন্দ্রদাশ জানান, জনবল সংকট নিরাশনে মন্ত্রানালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জনবল পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --