July 13, 2018
সাতক্ষীরায় উৎপাদিত নার্সারীর কদর বাড়ছে সারাদেশে : মাল্টা চাষে খুশি চাষীরা
অালোরপরশ নিউজঃ:সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় নার্সারী করে স্বালম্বী হচ্ছে হাজারো মানুষ। প্রতিবছর কয়েক লক্ষ বৃক্ষের চারা এ জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। এ জেলায় উৎপাদিত নার্সারীর কদর সারাদেশে । জেলায় ২০৪ জন পেশাদার বৃক্ষ প্রেমিকী সারা বছরই ফলদ, বনজ, ভেষজ, ফুল ও শোভাবর্ধনকারী গাছের চারা উৎপাদন করে থাকে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এখানকার উৎপাদিত নার্সারী কোটি টাকা বেচা-কেনা হয়ে থাকে বলে নার্সারী মালিকরা জানান। জেলার ঝাওডাঙ্গা,কলারোয়া,পারুলিয়া,পাটকেলঘাটা,ভোমরা সহ বিভিন্ন হাটে বাজারে কলম বেচা কেনার ধুম পড়ে গেছে। জেলার বাইরে থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা এখন সাতক্ষীরাতে কলম কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ছায়া, বাতাস, জ্বালানী, আসবাবপত্র, ঘরবাড়ি তৈরী, পুষ্টি ও খাদ্যের প্রয়োজনে মানুষ বসতবাড়ির আশে পাশে রোপণ করছে প্রচুর ফলজ, বনজ ও ভেষজ বৃক্ষের চারা। যত দিন যাচ্ছে উদ্যান উদ্ভিদের চারার চাহিদা ততই বাড়ছে। জেলাতে গড়ে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য মান সম্মত নার্সারী। অর্থনীতি ও পরিবেশ রক্ষায় নার্সারীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকলেও এ খাতকে এখনো দেওয়া হয়নি শিল্পের মর্যাদা । এর উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য নেয়া হয়নি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা। নেই এ শিল্পের দক্ষ জনশক্তি গড়ার জন্য কোনো প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। ফলে সুবিধা বঞ্চিত এ পেশায় সংশ্লিষ্টরা। জি.এম আব্দুল্লাহ। ছোট বেলা থেকেই নার্সারী করে আসছে। বর্তমানে ১৫ বিঘা জমিতে তার বিভিন্ন ধরণে নার্সারী। প্রায় দুই লক্ষ গাছের চারা তার নার্সারীতে। শহরের টিবি হাসপাতাল সংলগ্ন মিয়াসাহের ডাঙ্গীতে তার বেশির ভাগ নার্সারী। মায়া কানান তার নার্সারীর নাম। ২০১০ সালে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছ থেকে নার্সারীতে পুরুষ্কার গ্রহণ করেন। এছাড়া জেলা উপ জেলা সহ বিভিন্ন মেলাতে তিন প্রথম স্থান অধীকার করেন। প্রতি বছর তিন লক্ষ টাকা খরচ করে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার গাছের চারা তিনি বিক্রি করেন। এ বছর তার ক্ষেতে মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিটা গাছে মাল্টা ধরে গাছ নুয়ে পড়েছে। জাম,জামরুল,পেয়ারা,লেপু,জলপাই,লিচু সহ বিভিন্ন জাতের ফলদ, বনজ, ভেষজ, ফুল ও শোভাবর্ধনকারী গাছে লক্ষাধীক কলম বেধেঁছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়াতে এবছর তিনি ক্ষতির আশঙ্কা করছে। সরকারী ভাবে নার্সারীর সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও জেলা নার্সারী মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল আমিন জানান, তাদের সমিতিতে ২০৪ জন নার্সারী মালিক রয়েছে। তিনি জানালেন,এক সময়ে এ পেশায় ব্যাপক লাভ হত কিন্তু বর্তমানে কোন রকমে খরচটা উঠে। সরকারী ভাবে তদারকী বৃদ্ধি ও নার্সারী মালিকদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করলে এ খাত অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। সাতক্ষীরা শহরের উপকণ্ঠের লাবসা এলাকায় চোখ জুড়ানো এ বাড়ির ছাদে বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। মেরিন ইঞ্জিনিয়ার শেখ মনিরুজ্জামান ও তার স্ত্রী শাহিনা আক্তার এটি গড়ে তুলেছে। এই দম্পতি তাদের তিন হাজার দুইশ বর্গফুট বাড়ির ছাদে কয়েকশ গাছগাছালির একটি বাগান গড়ে তুলেছেন। শাহিনা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হলেও সেই ছোটবেলা থেকে তিনি গাছ লাগাতেন। আমি স্কুলের টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে বাবার বাড়িতে বাগান করতাম। শ্বশুর বাড়িতে এসে দেখি স্বামীরও বাগান করার শখ। দুই বৃক্ষ প্রেমিক মিলে শুরু করে দিলাম গাছ লাগানো।’ সাতক্ষীরার অর্থনীতিতে ও পরিবেশ সংরক্ষণে নার্সারীর গুরুত্ব অপরিসীম। নার্সারী হলো এমন একটি জায়গা, যেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ফুল, ফল, সবজি, ভেষজ ও বনজ গাছের চারা ও কলম উৎপাদন করে বিক্রি বা বাজারজাত করার পূর্ব পর্যন্ত পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করা হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল মান্নান জানান,নার্সারী খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারের কৃষি বিভাগ, বন বিভাগ সহ বিভিন্ন মন্ত্রনালয় চাষীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন ধরণে উদ্যোগ নিয়েছে। সাতক্ষীরায় নার্সারী মালিকদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে খোজ খবর নেয়া সহ বিভিন পরামর্শ দেয়া হয়। |
|
সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত |
e-mail: alorparosh@gmail.com- -- |