March 17, 2018
কলারোয়ায় কলেজের প্রাচীর ঘেষে ফসলী জমিতে ইটভাটা! নিষেধাজ্ঞার ৩বছর পরও চলছে কার্যক্রম, নীরব প্রশাসন

আলোর পরশ.কম:জেলার কলারোয়ায় উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নে কৃষি জমি লিজ নিয়ে তৈরী অবৈধ ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ চলছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ৩বছর ইটভাটার কার্যক্রম চললেও নীরবতা পালন করছে কলারোয়া উপজেলা প্রশাসন। এলাকাবাসির অভিযোগ, ‘মিতা ব্রিকস’ নামের ওই ইটভাটার মালিক ছলিমপুর গ্রামের মৃত, ছেপাতউল্লাহ সরদারের ছেলে স্থানীয় প্রভাবশালী মিনহাজ উদ্দীন। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। যে কারণে উপজেলা প্রশাসনের নীরবতা এমনটি দাবি এলাকার মানুষের।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালে ৪০ বিঘা কৃষি জমি লিজ নিয়ে ভাটাটি নির্মাণ করা হয়। ভাটাটির পাশে (প্রায় ২০ গজ) রয়েছে বিশাল আয়তনের কৃষি জমি ও জনবসতি। সরকারের ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে (২০১৩) কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নির্মাণ অবৈধ হলেও ভাটাটি কলেজের প্রাচীর ঘেষে (১০ গজ) নির্মান করা হয়েছে। এছাড়া ভাটা নির্মানের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামুলক হলেও সেটি নেই। ইটভাটায় অগ্নিসংযোগের আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লিখিত অনুমতি নেওয়ার বাধ্য বাধকতা থাকলেও এ ভাটার কোন অনুমোদন নেই। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্মিত উপজেলা, ইউনিয়ন বা গ্রামীন সড়ক থেকে কমপক্ষে আধা কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করা হলেও মিতা ব্রিকসটি কলারোয়া-খোরদো সড়কের পাশে (রাস্তা সংলগ্ন) নির্মাণ করা হয়েছে।
হাজী নাছির উদ্দীন কলেজেরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম ক্ষোভ প্রকাশ করে আমাদের সময়কে বলেন, যেখানে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তিন বছর যাবত গুরুতর অভিযোগ নিয়ে ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া দু:খজনক। তিনি অবিলম্বে কলারোয়া উপজেলা প্রশাসনের ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
ছলিমপুর গ্রামের খলিল সরদারের ছেলে মিঠু ও স্থানীয় কৃষকরা জানায়, প্রভাবশালী মিনাহজ উদ্দীন উপজেলার ছলিমপুর হাজী নাছির উদ্দীন কলেজের সীমানা প্রাচীর ঘেষে ৪০ বিঘা ফসলী জমি কৃষকদের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে লিজ নিয়ে সেখানে ইটভাটা নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এসময় কলেজসহ এলাকার পরিবেশ রক্ষা, ফসলী জমি উদ্ধার, অবৈধ ইটভাটা নির্মাণ বন্ধের দাবিতে উপজেলা সদরে ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, অবিভাবক, স্থানীয় কৃষক ও এলাকাবাসি মানবন্ধনসহ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে ইটভাটা নির্মাণ বন্ধ করতে পারেনি। পরে অবৈধ মিতা ব্রিকস ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়ে হাজী নাছির উদ্দীন কলেজের শিক্ষক, অবিভাবক, শিক্ষার্থী ও এলাকার কৃষকসহ ৯৯ জন ব্যক্তির স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন করেন। এঘটনায় লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় সরজমিনে ঘটনা¯’ল তদন্ত করে গত ২০-৮-২০১৫ তারিখে পরিবেশ অধিদপ্তরের সরহারি পরিচালক (প্রচার) মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় মিতা ব্রিকস ইটভাটার মালিক মিনহাজ উদ্দীনকে অবৈধ নির্মাণ করা ভাটা অপসারণ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। নির্দেশনায় আরো জানানো হয়, ইটভাটা অপসারণ না করা হলে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, একই অভিযোগ তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকেও অবৈধ ইটভাটা অপসারণের জন্য কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করেন। পরে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট মিনহাজ উদ্দীন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়ের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অবৈধ নির্মাণ করা ইটভাটা মিতাব্রিকস অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে সরকারের আইন অনুযায়ী ইটভাটা নির্মাণ করবেন এবং উক্ত ভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ করার কথা উল্লেখ করে লিখিত মুচলেকা দেন। তিনি জানান, মুচলেকা প্রদানের পর ২০/২৫ ভাটার কার্যক্রম বন্ধ রাখে। পরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে পুনরায় ইটভাটার কার্যক্রম শুরু করেন এবং বর্তমানে চলমান রয়েছে।
ছলিমপুর হাজী নাছির উদ্দীন কলেজেরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল আলীম জানান, কলেজের প্রাচীর ঘেষে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার জন্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সচেতন এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। পরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে ইটভাটা অপসারণের নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসণের নীরবতার কারণে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
মিতাব্রিকের মালিক মিনহাজ উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি। এসময় তিনি বলেন, আপনি রিপোর্ট করবেন না, আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই।
এবিষয়ে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরা পারভীন জানান, এবিষয়ে আমার জানা নেই। আমি আপনার মাধ্যমে আজই জানতে পারলাম। তিনি ইটভাটার বিষয়ে খোজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

More News


সম্পাদক র্কতৃক প্রকাশিত

e-mail: alorparosh@gmail.com- --